রুম্পা মাখালেরা হোক অনুপ্রেরণা

একটা সময় বাংলাদেশের শিল্প–কলকারখানা বলতে সবার আগে চলে আসত পাটশিল্প ও পাটকলের কথা। পাট অথ৴নীতির সুফল পেয়েছিল হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার। পাটের সেই সুদিন নেই, পাটকলগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু বন্ধ হওয়া পাটকলগুলোর শ্রমিক পরিবারগুলো কী করে টিকে আছে? তাদের কথা কি মনে রেখেছে এ রাষ্ট্র? তেমনি এক পাট পরিবার থেকে উঠে আসা বাগেরহাট শহরতলির রুম্পা মাখাল। নিজে সংগ্রাম করে সফল হয়েছেন, সেই সঙ্গে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন গ্রামের অন্য নারীদেরও।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার চন্দনীমহল গ্রামে জন্ম রুম্পা মাখালের। খালিশপুরের একটি পাটকলে চাকরি করতেন তাঁর বাবা স্বপন মাখাল। হঠাৎ পাটকল বন্ধ হয়ে গেলে পুরো পরিবার অভাবে পড়ে। দুই ভাইকে আর বেশি পড়াশোনা করাতে পারেননি বাবা। তবে তিনি কোনোমতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছিলেন। এরই মধ্যে বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর সঙ্গে চলে আসেন বাগেরহাটে। 

বাবার অভাবের সংসার থেকে স্বামীর ঘরে এসেও স্বস্তি ছিল না রুম্পার। স্বামী যা আয় করতেন, তা দিয়ে সংসার চালাতে ভীষণ কষ্ট হতো। তাই সংসার চালাতে স্বামীকে সহায়তা করতে চাকরির জন্য গেছেন নানা জায়গায়। তবে বিভিন্ন এনজিও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুরেও কাজ মেলেনি। তখন স্কুলজীবনে শেখা হাতের কাজের ওপর সাহস করে নেমে পড়লেন নিজে কিছু করবেন বলে। এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

কাশফুলের শুকনা খড়ি ও খেজুরগাছের পাতা দিয়ে রুম্পা শুরু করেন হস্তশিল্পের কাজ। এরপর তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন আরও অনেকে। স্থানীয় ৪৫ নারীকে নিয়ে রুম্পার দল এখন তৈরি করছে ডালা-ঝুড়িসহ নানা ধরনের বাহারি পরিবেশবান্ধব পণ্য। দলের প্রত্যেকেই কাজ করেন নিজ বাড়িতে। রুম্পার মাধ্যমে তাঁরাও এখন স্বাবলম্বী।

ফলের ঝুড়ি, ফ্লোর কাভারিং ম্যাট, টেবিল ম্যাটসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুড়ি-ডালাসহ ঘর সাজানোর জিনিসপত্র বানায় রুম্পার দল। পণ্যের কাঁচামাল স্থানীয়ভাবেই সংগ্রহ করেন তাঁরা। এগুলো সংগ্রহ করে রোদে শুকানো, পানিতে ভেজানো, রং করতে হলে সেগুলো চুলায় জ্বালানো—এমন সব প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত পুরো দল। অনেকে নতুন যুক্ত হয়ে কাজ শিখছেন। শিখতে শিখতে আয়ও করছেন। দুই বছর ধরে তাঁদের পণ্য বিক্রি ছিল ২৫ লাখ টাকার ওপরে। 

রুম্পা ছিলেন আমাদের সমাজে অর্থকষ্টে থাকা আর দশজন নারীর মতোই। কিন্তু তিনি বসে থাকেননি। স্কুলজীবনে শেখা শুধু হাতের কাজের ওপর ভরসা করে এগিয়ে গেছেন এবং নিজ প্রচেষ্টা, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের গুণে সাফল্য অর্জন করেছেন। সেই সঙ্গে সমাজেও অন্যান্য অভাবী নারীর কর্মসংস্থানে অবদান রাখছেন। রুম্পার মতো নারীরা আমাদের সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা। আমরা তাঁকে সাধুবাদ জানাই।