বেহাল বীর নিবাস

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কেন এ অবহেলা

বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। জীবনের মায়া ও পরিবারের টান উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করে এনেছেন তাঁরা। অথচ তাঁরাই এ দেশে অবহেলার শিকার হন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দেওয়া হলেও সেটি থেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। অসহায় ও অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের মহৎ উদ্যোগ মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস প্রকল্প। এর মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুন্দরভাবে বাস করতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একতলা ভবন নির্মাণ করে দেয় সরকার। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই বেশ কিছু ঘর এখন বেহাল। মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে এমনটি দেখা গেছে। সেখানকার বীর নিবাসের কোনো ঘরে পলেস্তারা খসে পড়েছে, কোনো ঘরের ছাদ চুইয়ে ভেতরে পানি পড়ছে, কোনো ঘরের মেঝে ভেঙে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সেসব ঘরে কী করে বসবাস করা সম্ভব।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) মাদারীপুর জেলা ৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য ভবন নির্মাণ করে। প্রতিটি বীর নিবাস নির্মাণে খরচ হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। ১১টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ ঘরগুলো নির্মাণ করে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে অনেক ঘর থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঘরের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল শৌচাগার, নলকূপ। সেগুলোও অকেজো হয়ে গেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও উপকরণের কারণে ঘরগুলো এমন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা ঘরগুলো সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন।

এলজিইডি মাদারীপুর কার্যালয় জানাচ্ছে, বীর নিবাসের ঘর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়নি। এমনকি অন্য দপ্তর থেকেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই।

জেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার জাহাঙ্গীর কবির বলেন, এটি সরকারের মহৎ উদ্যোগ হলেও প্রকল্পের ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতি থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রতারিত হয়েছেন। যদিও নির্মাণকাজে অনিয়ম হয়েছে বলে অস্বীকার করেছেন এলজিইডির কর্মকর্তা ও ঠিকাদারেরা।

ইতিমধ্যে বীর নিবাসগুলো সংস্কারের জন্য মাদারীপুরের জেলা প্রশাসনের কাছে কয়েকটি পরিবার আবেদন করেছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা বলা হবে। বাজেট বরাদ্দ করে ঘরগুলো মেরামত করার চেষ্টা করব।’ আমরা আশা করছি, তাঁর চেষ্টায় কোনো ঘাটতি থাকবে না। দ্রুত বাজেট বরাদ্দ করে বীর নিবাসগুলো সংস্কার করা হোক।