খাল খনন করে দুর্ভোগ লাঘব করুন

সোনালি আঁশখ্যাত পাট একসময় এ ভূখণ্ডের অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ভুল নীতির কারণে বাংলাদেশে পাটের সেই সুদিন বহুদিন হলো নেই। কিন্তু পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে সারা বিশ্বে পাটের কদর সাম্প্রতিক কালে ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়ে চলেছে। ফলে এ পাটশিল্পে যুগোপযোগী ও আধুনিক নীতি গ্রহণ করা হলে আমাদের রপ্তানির ক্ষেত্রে একক যে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীলতা, তা থেকে বেরিয়ে রপ্তানিকে বহুমুখী করার একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের নীতিনির্ধারকেরা পাটশিল্পের এই যুগান্তকারী সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না; বরং এ খাতের প্রতি তাঁদের আচরণ বিমাতাসুলভ। একের পর এক পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা এর দৃষ্টান্ত। এই প্রতিকূল বাস্তবতার মধ্যে এখনো যেসব কৃষক পাট চাষ করেন, পাটের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা থেকেই তাঁরা যে তা করেন, সেটা বলাটা অত্যুক্তি হবে না।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার কৃষকেরা পানির অভাবে জাগ দিতে না পারায় কতটা মাঠের পর মাঠ পড়ে আছে পাট। সময়মতো পাট না কাটতে পারায় সেগুলো জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। সেচযন্ত্র ভাড়া করে কিংবা নছিমন, ঘোড়ার গাড়ি করে দূরে নিয়ে গিয়ে পাট জাগ দিতে যে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে, তাতে কৃষকদের প্রতি পাখি জমিতে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে কৃষকেরা পাট চাষে কত দিন আর আগ্রহ ধরে রাখতে পারবেন?

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সরকারি ব্যবস্থাপনায় খাল খনন করার দাবি জানিয়েছেন। বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাও বলছেন, পাট চাষে আগ্রহ থাকলেও স্থায়ীভাবে সমস্যা দূর না হলে সেখানকার কৃষকেরা ভবিষ্যতে আগ্রহ হারাবেন। তিনি জানান, বালিয়াকান্দি সদরসহ নারুয়া, ইসলামপুর ও জঙ্গল ইউনিয়নে খাল খনন করা হলে পানির সমস্যা দূর হতো।

এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে পানির অভাবে মাত্র ৩৫ শতাংশ জমির পাট কাটতে পেরেছেন কৃষকেরা। তাঁদের বৃষ্টির পানির দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। আমরা আশা করি, পাট জাগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বালিয়াকান্দির কৃষকেরা যে দুর্ভোগে পড়েছেন, সেটা নিরসনে প্রশাসন কৃষকদের পাশে দাঁড়াবেন। খাল খননের উদ্যোগ নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যার সমাধান করবেন।