সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সিডিএর উন্নয়ন প্রকল্প

সিটি করপোরেশন তাহলে কী করবে

বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রাম শহর ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর পরিকল্পিত উন্নয়নের প্রতি দৃষ্টি রাখা যেখানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দায়িত্ব, সেখানে তারা সেটি না করে নিজেদের এখতিয়ার ও সামর্থ্যের বাইরে প্রকল্প নিয়ে নগরবাসীর দুর্ভোগ ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটিতে বর্তমানে ৫১৯ পদের বিপরীতে ৩২০ জন কর্মরত।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১৫ বছরে ১৮ হাজার কোটি টাকার ২৫টি প্রকল্প হাতে নিলেও একটির কাজও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি। চট্টগ্রাম নগরের খাল ও নালা-নর্দমা খনন এবং এর রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালে এ-সংক্রান্ত একটি বড় প্রকল্প হাতে নেয়।

৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার সেই প্রকল্প তিন বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ছয় বছরেও শেষ করতে করতে পারেনি। প্রতিবছর নগরবাসী জলাবদ্ধতায় ভুগছে। আগে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজটি করত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

সিডিএর অন্যতম দায়িত্ব ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ইমারতের (ভবন বা স্থাপনা) নকশা অনুমোদন করা ও অবৈধ নির্মাণ রোধ করার পাশাপাশি একটি টেকসই বিকশিত ও বাসযোগ্য চট্টগ্রাম নগর গঠন। এ ক্ষেত্রে তারা লোকবলের ঘাটতি দেখালেও এখতিয়ারবহির্ভূত অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

২০০৮ সালে প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) অনুযায়ী, খালের পাড় থেকে ১২ ফুটের মধ্যে কোনো স্থাপনা করা যাবে না। কিন্তু এই নির্দেশনা না মেনে খালের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ১ হাজার ৮০৪টি স্থাপনা। কিন্তু সিডিএ এসব অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা
নিতে পারেনি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামকে সিডিএর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর সিডিএ মূল দায়িত্ব পালনের চেয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দেয়। ২০১০ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলমের জয়ী হওয়ার কারণেই সিডিএকে এখতিয়ারবহির্ভূত প্রকল্প দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনে রাখা উচিত, সিডিএর মতো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনও সরকারের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। মেয়র যে দলেরই হোন না কেন, তিনি সরকারের উন্নয়ননীতি অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য। স্থানীয় উন্নয়নকে দলীয় রাজনৈতিক দৃষ্টিতে দেখা কোনোভাবে সমীচীন নয়। তদুপরি সিটি করপোরেশন একটি নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান; যাদের নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিডিএর পদাধিকারী ব্যক্তিদের সেটি করতে হয় না।

সিডিএর নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের গার্ডার ভেঙে ১৪ জন মানুষের প্রাণহানির পরও তাদের হাতে এ ধরনের প্রকল্প দেওয়া কতটা যৌক্তিক হয়েছে? স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলোর দায়িত্ব ভাগ করা আছে। একজনের দায়িত্ব আরেকজন করলেই সমস্যা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও সিডিএর মধ্যে এ নিয়ে চাপান–উতোরও আছে।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার যথার্থই বলেছেন, ‘উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে সিডিএ নিজেই অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়নে জড়িয়ে পড়েছে।’ এটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আগে থেকে রাস্তাঘাট নির্মাণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ করে আসছিল, সেটি সিডিএর কাছে হস্তান্তরের প্রয়োজন কেন পড়ল, সেই প্রশ্ন আমাদেরও।