সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সিন্ডিকেট খুঁজে বের করুন, কৃষক বাঁচান

মুন্সিগঞ্জের কৃষকদের দোষটা কী? কেন তাঁদের সার কিনতে গিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে? এই জবাব কে দেবে? প্রথম আলোর মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি সারের দাম সরকার বেঁধে দিয়েছে।

কত টাকা লাভে এই সার কৃষকদের কাছে পৌঁছাতে হবে, তা–ও বলা আছে। অথচ সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেশি দামে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সরকার নির্ধারিত দাম ২৫ টাকা, কৃষকদের কাছে বিক্রির কথা ছিল ২৭ টাকায়। একইভাবে ১৯ টাকার ডিএপি ২১ টাকায়, ১৮ টাকার এমওপি ২০ টাকায় কৃষকের হাতে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু কৃষক কিনছেন যথাক্রমে ৩০ টাকা, ২৩ টাকা ও ২৪ টাকায়।

খুচরা ব্যবসায়ীরা এ জন্য দায়ী করছেন ডিলারদের। সিন্ডিকেটের বাংলাদেশে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেল ও মুরগির ডিমে সিন্ডিকেট আছে। তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। এই যখন অবস্থা, তখন সারের ডিলাররাও সুযোগ নিচ্ছেন।

তবে মুন্সিগঞ্জের ঘটনাটি একটু আলাদা। কারণ, সিন্ডিকেট এমন এক জিনিস, যার জ্বালা বোঝা যায়, কিন্তু আমজনতা দেখতে পায় না আর সরকার দেখতে চায় না। কিন্তু মুন্সিগঞ্জের কৃষকেরা সারের এই কৃত্রিম সংকটের জন্য দুজন ডিলারকে দায়ী করছেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই দুই ডিলারের নিজস্ব ডিলারশিপ আছে, আবার অন্যদের ডিলারশিপ কিনে রেখেছেন। ফলে বাজার চলছে তাঁদের কথায়। যদিও এ অভিযোগ তাঁরা অস্বীকার করেছেন।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সারের ডিলারশিপ দিয়ে থাকে। একজন ডিলার অন্যের ডিলারশিপ কি কিনতে পারেন? সারের বেশি দাম বা সংকটের এ অভিযোগ নতুন নয়। যখন যে শস্যের মৌসুম, যে সারটি প্রয়োজন, সেটিরই ঘাটতি দেখা দেয়। বাজারও চলে যায় সিন্ডিকেটের হাতে। পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও হয়। এতে কর্তৃপক্ষের টনক যদি নড়তই, তাহলে চিরকালের মতো সার নিয়ে জালিয়াতি বন্ধ হতো।

বোঝাই যাচ্ছে, কর্তৃপক্ষের কানে কথা যায়নি। এখন যে কৃষক আলু ফলাতে সার কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন, তিনি হয়তো আবার বিক্রেতার কাছে ফিরে যাবেন। জমানো টাকা ভেঙে বেশি দামে সার কিনবেন। তাঁর কঠোর পরিশ্রমে আলুরও হয়তো বাম্পার ফলন হবে।

তিনি সামান্য কিছু টাকায় সেই আলু বিক্রি করবেন। সেই আলুও পড়বে সিন্ডিকেটের হাতে। কৃষক সেখানেও মার খাবেন। প্রশ্ন হলো, সরকার যদি নির্ধারিত দামে সার বিক্রিতে ব্যবসায়ীদের বাধ্য করতে না পারে, তাহলে দাম বেঁধে দেওয়ার দরকার কী? সিন্ডিকেট খুঁজে বের করুন। কৃষকদের বাঁচান।