সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই নৈরাজ্য বন্ধ হোক

দেশে বেকারত্ব বাড়ছে; কিন্তু সে অনুযায়ী কর্মসংস্থান বাড়ছে কি? সরকারি-বেসরকারি নিয়োগের জন্য কর্মীর চাহিদা আর আবেদনের সংখ্যার তফাত দেখলেই সে বাস্তবতা বোঝা যায়। ফলে যেকোনোভাবে একটি চাকরির ব্যবস্থা করাই অনেকের একমাত্র লক্ষ্য।

দূরে কোথাও না গিয়ে নিজ এলাকার নিকট-দূরত্বে চাকরি করার জন্য অনেকের পছন্দ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি চাকরির জন্য খরচ করতে হয় লাখ লাখ টাকা।

এই নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে থাকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তাঁদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের হাতে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কানাঘুষা চললেও রংপুরের মিঠাপুকুরে এর একটি বাস্তব চিত্র পাওয়া যায়।

প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখভালের জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকে। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও অন্যান্য জনবল নিয়োগ দিয়ে থাকে এই কমিটি। এখন জেলা-উপজেলাগুলোয় স্থানীয় সংসদ সদস্যদের প্রভাব ছাড়া সেসব ব্যবস্থাপনা কমিটি হয় না।

ফলে সেই কমিটি যাঁদের নিয়োগ দেয়, তা মূলত সংসদ সদস্য ও তাঁদের প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণেই হয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, মিঠাপুকুরে এমপিওভুক্ত নিম্ন ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি কলেজ এবং দাখিল, আলিম ও ফাজিল মাদ্রাসা রয়েছে ১৬৭টি। গত তিন বছরে মিঠাপুকুর উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক, ল্যাব সহকারী, আয়া, নৈশপ্রহরী ও নিরাপত্তাকর্মী পদে দেড় শতাধিক নিয়োগ হয়েছে। এসব পদের জন্য অনেকের কাছ থেকে ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।

উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য (রংপুর-৫) এইচ এন আশিকুর রহমান ও তাঁর ছেলে রাশেক রহমানের ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। এই ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যের নানা অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগের জন্য তঁাদের অনুমতি বা সম্মতি লাগে। প্রথম আলোর সরেজমিন প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে; যদিও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাবি, যাঁরা নিয়োগ পাননি, তাঁরা এই নিয়োগ-বাণিজ্যের অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাও এখনো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন না। তিনি নিজেই বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোকে নিয়োগের জন্য সংসদ সদস্য তাঁর ছেলের সম্মতি নিতে বলেন।

এখন এমন পরিস্থিতিতে স্বচ্ছ ও অনিয়মমুক্ত নিয়োগ কীভাবে সম্ভব? যোগ্য প্রার্থীই যদি নিয়োগ না পান, সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও পাঠদানের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকে কি? এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এনটিআরসিএর (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হয়।

নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ নিয়ে এই কর্তৃপক্ষও দায় এড়াতে পারে না। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এই নিয়োগ-বাণিজ্যের অবসান হোক।