সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

দুস্থ ব্যক্তিদের বরাদ্দ বেহাত

অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

অনিয়ন্ত্রিত বাজারব্যবস্থার দরুন বিপর্যস্ত জনজীবন। বেশি কষ্টে আছেন দরিদ্র, খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে টিসিবি, ওএমএসের মতো খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু রেখেছে সরকার। যদিও সেসব কর্মসূচি কোনো অর্থেই যথেষ্ট নয়।

অনেক মানুষ সারা রাত লাইন ধরেও খাদ্যপণ্য না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। কয়েক মাস ধরে সংবাদমাধ্যমগুলোতে এমন খবর প্রতিদিনই আমরা দেখছি। এমন পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, ওএমএসের চাল সাধারণ মানুষের মধ্যে বিক্রি না করে নিজেই রেখে দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলর।

অন্যদিকে জামালপুর সদর উপজেলার অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে বিতরণের জন্য সৌদি আরব সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো বেশির ভাগ দুম্বার মাংস জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। সুফলভোগীদের এভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আর সেটি করছেন জনপ্রতিনিধিরাই। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ সিটির ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আবদুল করিম ওরফে বাবু ওএমএসের পরিবেশক থেকে বরাদ্দকৃত দুই টন চাল নিজেই কিনে নেন। নিয়ম অনুযায়ী, খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া এসব চাল ৩০ টাকা দরে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি কিনতে পারেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে নির্দিষ্ট একজন ডিলার ওই সব চাল বিক্রি করেন।

স্থানীয় কাউন্সিলর পুরো বিষয়টি তদারক করেন। কিন্তু রক্ষক এখানে হয়েছে ভক্ষক। সেখানকার মানুষ ওএমএসের চাল কেনার সুযোগ পাননি। আবদুল করিম নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের বক্তব্য, সব চাল একজনের রেখে দেওয়াটা অপরাধমূলক কাজ। বিষয়টি তদন্তে একটি কমিটি করা হবে। তারপর নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা সেই প্রভাবশালী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় কি না, সেটিই দেখার অপেক্ষা।

সৌদি সরকার দরিদ্র ও দুস্থদের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রতিবছর বাংলাদেশে দুম্বার মাংস পাঠায়। সেই দুম্বার মাংস তালিকা করে দুস্থ, এতিমখানা ও মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয়ে থাকে।

কিন্তু জামালপুর সদর উপজেলায় যাঁরা এ মাংস বিতরণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁরাই নিজেরা যে যেভাবে পারেন, তা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন। মাদ্রাসা বা দুস্থরা সে মাংস পেয়ে থাকলেও বরাদ্দ অনুসারে কম। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) বক্তব্য, ‘কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে খোঁজখবর নিয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আমরা তাঁর ওপর আস্থা রাখতে চাই।