জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে। যেসব স্থানে পুলিশ বাধা দেয়নি, সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু যেখানে পুলিশ বাধা দিয়েছে, সেখানেই অঘটন ঘটেছে। অনেকে আহত হয়েছেন।
গত রোববার ‘প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনসমূহ’-এর ব্যানারে নয়টি বাম ছাত্রসংগঠন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সমাবেশের আয়োজন করে। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলাকালেও তাদের ওপর চড়াও হওয়া সরকারের চণ্ডনীতিরই বহিঃপ্রকাশ। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার-এর ছবিতে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সমাবেশের একপর্যায়ে ছাত্রদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আক্রান্ত ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে ছাত্রীরাও পুলিশের পিটুনি থেকে রেহাই পাননি। বলা যায়, বিনা উসকানিতে পুলিশ প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেছে।
নয়টি প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের এ সমাবেশ থেকে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি করা হয়েছে। কেবল শাহবাগ নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা মিছিল-সমাবেশ করেছে। শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশ করা নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে আছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেতন হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা ও অযৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন না তুলেও যে কথা বলা জরুরি, তা হলো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বা মিছিলে কেন বাধা দেওয়া হবে? জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষুব্ধ কেউ প্রতিবাদও করতে পারবে না? সরকার এক ধাপে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে, জনজীবনে এরই মধ্যে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে শুরু করেছে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও স্বীকার করেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের কষ্ট হবে। তঁারা নিরুপায় হয়ে দাম বাড়িয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা এ কোন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বাস করছি যে মানুষ তার কষ্টের কথাটি বলতে পারবে না! রাজনৈতিক বা ছাত্রসংগঠনগুলো প্রতিবাদ সমাবেশ করতে গেলেই হামলার মুখে পড়বে—এটা কেমন কথা?
কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে এলেও বাধা দেওয়া হবে না; চা খাইয়ে আপ্যায়ন করা হবে। অথচ সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সুযোগ পেলেই প্রতিবাদকারীদের ওপর চড়াও হচ্ছে। ভোলায় বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা ছাত্রদলের সভাপতিসহ দুজন নিহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন কি সরকারের অবস্থানের বাইরে গিয়ে এসব করছেন?
ভোলার মতো শাহবাগের ঘটনার দায় সরকার ছাত্রদের ওপরই চাপাতে চাইছে। পুলিশের রমনা অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ বলেছেন, ‘হামলার অভিযোগ অসত্য। পুলিশ তাদের (ছাত্রসংগঠন) ওপর কোনো হামলা করেনি। তারাই বরং পুলিশের ওপর হামলা করেছে।’ তাঁর এ বক্তব্য কেবল অসত্য নয়, অবিশ্বাস্য।
ছাত্ররা যদি পুলিশের ওপর হামলা করে থাকেন, তাহলে তাঁরাই আহত হলেন কেন? সব পত্রিকায় ছাত্রদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটার ছবি ছাপা হয়েছে। হামলাকারী পুলিশ সদস্য বা হামলার নির্দেশদানকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে? যদি না হয়, তাহলে বুঝতে হবে সরকারের ইচ্ছাতেই এসব হচ্ছে।
আইনের স্বেচ্ছাচারমূলক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় কোনো অঘটন ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, শক্তি প্রয়োগ করে মানুষের প্রতিবাদের অধিকার হরণের পরিণাম কখনোই ভালো হয় না। আইন প্রয়োগের নামে বাড়াবাড়ি বন্ধ হোক।