সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

শ্রমিকনেতা শহিদুল হত্যা

খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক

শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা আদায়ের জন্য কারখানায় মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ফেরার পথে একজন শ্রমিকনেতাকে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে জীবন দিতে হলো, এর চেয়ে অবিশ্বাস্য ও মর্মান্তিক ঘটনা আর কী ঘটতে পারে?

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ঈদের আগে ২৫ জুন রাতে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি নিয়ে আলোচনা করার পর শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম গাজীপুরের টঙ্গীর প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড থেকে ফিরে আসার পথে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন এবং পরে হাসপাতালে মারা যান। তাঁর সঙ্গী দুই শ্রমিকনেতা মো. মোস্তফা ও মো. শরীফ আহত হলেও বর্তমানে সুস্থ আছেন।

নিহত শহিদুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি। ওই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কল্পনা আক্তার বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা করেছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই আরেকটি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর অভিযোগ, হামলাকারীরা মালিকপক্ষের ভাড়াটে সন্ত্রাসী। যদিও কারখানার মালিক এ ঘটনার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন।

স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বকেয়া বেতনের বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্থতা করতে যাওয়া শহিদুলসহ তিন শ্রমিকনেতার ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেন ‘হানিফ ম্যানেজার’ নামের এক ব্যক্তি। তিনি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী কামরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। কামরুলের কাছ থেকে কেনা জমিতেই পোশাক কারখানাটি করেছেন মো. সাইফ উদ্দিন।

শহিদুল হত্যা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী, মালিকপক্ষ ও থানা-পুলিশের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন ভাষ্য পাওয়া যাচ্ছে। বাদী বলেছেন, মালিকপক্ষের ভাড়াটে শ্রমিকনেতারা শহিদুলকে হত্যা করেছে। থানা-পুলিশের সাফাই হলো, এর সঙ্গে মালিকপক্ষের সংশ্লিষ্টতা নেই। সে ক্ষেত্রে কার কার সংশ্লিষ্টতা আছে, সেটা তাদের বলতে হবে। প্রধান আসামি হানিফ ম্যানেজারের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বা মালিকপক্ষের কী ধরনের সম্পর্ক ছিল বা আছে, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্বও পুলিশের।

বেতন-ভাতা নিয়ে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। শ্রমিক হত্যার ঘটনায় প্রতিদ্বন্দ্বী শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নাম এসেছে। ওই কারখানা বা এলাকায় অন্য কোনো শ্রমিক সংগঠনের প্রভাব–প্রতিপত্তি থাকার অর্থ এই নয় যে সেখানে আর কেউ আলোচনা করতে যেতে পারবেন না।

শ্রমিকনেতা বা সংগঠনের দায়িত্ব শ্রমিকদের স্বার্থ দেখা। মালিকদের পক্ষে কোনো ভাড়াটে শ্রমিক সংগঠন বা নেতা কাজ করতে পারেন না। ১১ বছর আগে শ্রমিকনেতা আমিনুল ইসলাম হত্যার ঘটনা দেশের ভেতরে ও বাইরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। এমনকি এই হত্যার দায়ে যাঁকে আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, তিনি একজন পলাতক। ছয় বছর আগে মামলার রায় হলেও আসামিকে খুঁজে বের করতে পারেনি সরকার। আমিনুল হত্যার পুনঃতদন্ত চেয়েছেন তাঁর সহযোদ্ধারা।

শহিদুল ইসলামের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে সরকারকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে। অন্যদের মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি করেছেন। হত্যার দায়ে পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদের কেন পাকড়াও করা হচ্ছে না?

শহিদুল হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। স্থানীয় থানা-পুলিশের ওপর যেহেতু বাদীপক্ষের আস্থা নেই, সেহেতু অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে শহিদুল হত্যার তদন্ত করা হোক। আমিনুল ইসলামের হত্যার ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। হত্যার বিচারই কেবল হত্যা রহিত করতে পারে।