শিক্ষাবর্ষের ছয় মাস শেষ হতে চললেও নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এখনো পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন কাঠামো চূড়ান্ত না হওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এই মূল্যায়ন কাঠামোর আদলেই আগামী মাসে শুরু হওয়া ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ষাণ্মাসিক (অর্ধবার্ষিক) সামষ্টিক মূল্যায়ন, পরীক্ষামূলকভাবে নবম শ্রেণির বার্ষিক মূল্যায়ন কেন্দ্রভিত্তিক নেওয়াসহ কিছু কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা করেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়। বর্তমানে প্রথম থেকে তৃতীয় এবং ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে অধ্যয়ন করছে। বর্তমানে যারা নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তারাই নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম।
মূল্যায়ন কাঠামো চূড়ান্ত না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকেরাও আছেন অনিশ্চয়তায়। মূল্যায়ন তথ্য সংরক্ষণের জন্য ‘নৈপুণ্য’ নামে অ্যাপ চালু আছে; কিন্তু পাবলিক পরীক্ষার জন্য সেটি যুগোপযোগী করতে হবে; কিন্তু সেই কাজও থেমে আছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন কাঠামো চূড়ান্ত করতে মূলত শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে। এনসিটিবি গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার আলোকে মূল্যায়নের খসড়া প্রণয়ন করেছিল।
সম্প্রতি নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্তকরণ কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি যে চূড়ান্ত সুপারিশ করেছিল, তাতে এসএসসি পরীক্ষায় কার্যক্রমভিত্তিক অর্থাৎ হাতে-কলমে মূল্যায়নের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ আর লিখিত অংশের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ করতে বলেছিল; কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সভায় সেই প্রস্তাবও সংশোধন করা হয়। এতে এসএসসি পরীক্ষার সামষ্টিক মূল্যায়নের লিখিত অংশের ভাগ ৬৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করে। আর কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ হবে ৩৫ শতাংশ।
নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত সূত্রগুলো বলছে, মূল্যায়ন কাঠামো বাস্তবায়নে কয়েকটি ধাপ ঠিক করা হয়েছে। প্রথম ধাপে পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নের আদলে চলতি বছরের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ষাণ্মাসিক (অর্ধবার্ষিক) সামষ্টিক মূল্যায়ন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরিকল্পনায় আছে, আগামী বছর দশম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন পাবলিক পরীক্ষার মতো কেন্দ্রভিত্তিক হবে। তার আগে এই মূল্যায়ন কাঠামো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিষয়ভিত্তিক ‘রিসোর্স পুল’ গঠন করার কথা থাকলেও কার্যকর হয়নি। এ অবস্থায় আগামী ৩ জুলাই থেকে এই অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন হওয়ার কথা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান মূল্যায়ন কাঠামো দ্রুত চূড়ান্ত করার ওপর জোর দিয়েছেন। এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান মনে করেন, সবকিছু মোটামুটি ঠিক করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় অনুমোদিত হলেই সেটি সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
সবকিছু যদি ঠিকঠাকই থাকবে, পরীক্ষার মূল্যায়ন কাঠামো চূড়ান্ত করতে এত বিলম্ব কেন? শিক্ষা বিভাগের নীতিনির্ধারকেরা দেশবাসীকে বড় বড় খোয়াব দেখান, স্মার্ট শিক্ষার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আওয়াজ তোলেন। কিন্তু তাদের কাজকর্মে সেই চৌকসপনা লক্ষ করা যায় না। যেখানে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ জড়িত, সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই দীর্ঘসূত্রতা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
অবিলম্বে পরীক্ষার মূল্যায়ন কাঠামো চূড়ান্ত করা হোক।