সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কৃষক ও খামারিদের পাশে দাঁড়ান

লাম্পি স্কিন রোগের ‘মহামারি’

প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি বন্ধের পর থেকে প্রাণিসম্পদ খাতে বড়সড় উন্নয়ন ঘটেছে। কৃষক ছাড়াও নতুন নতুন উদ্যোক্তা খামারশিল্পের প্রতি ঝুঁকেছেন। বিনিয়োগ করেছেন বিপুল অর্থ।

দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে পুরোদস্তুর খামারি হয়ে গেছেন, এমন তরুণদেরও আমরা দেখি। তবে সেই খামারশিল্পে বড় ধরনের দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি)। সারা দেশে গরু-মহিষের মধ্যে এ রোগ মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে।

গত জুনে কোরবানি ঈদের আগে কয়েকটি জেলায় এলএসডি ছড়িয়ে পড়ায় আমরা সম্পাদকীয় লিখেছিলাম। সে সময় রোগটির বিস্তার রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা বলেছিলাম।

এখন লাখ লাখ কৃষক ও খামারির আতঙ্কে পরিণত হয়েছে রোগটি। বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন অনুমান করছে, কমপক্ষে ৫০টি জেলায় এলএসডি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এর আগে ২০২০ সালে প্রায় ২৫টি জেলায় এলএসডির সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল।

এলএসডি মূলত একটি ভাইরাসজনিত রোগ। মশা, মাছি ও খাবারের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে এ রোগ ছড়ায়। এ রোগের কারণে গরুর শরীরজুড়ে ছোট ছোট মাংসপিণ্ডের মতো ফুলে ওঠে।

চোখ দিয়ে পানি ঝরে, এমনকি চোখও অন্ধ হয়ে যেতে পারে। ষাঁড় গরুর ক্ষেত্রে ইনফার্টিলিটি এবং গর্ভবতী প্রাণীর গর্ভপাত ঘটে। এলএসডির কারণে বেশি সমস্যায় পড়েছেন কৃষক ও ঋণ নিয়ে গরু কেনা খামারিরা। পাবনার সাঁথিয়ার এক খামারি বলছেন, ‘কষ্টের টাকায় কেনা গরুটির পেটে বাচ্চা এসেছিল। কিন্তু লাম্পি রোগে কয়েক দিন আগে আমার গরুটি মারা গেছে।’

দেশের উত্তরাঞ্চলীয় নীলফামারী, নাটোর, দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা প্রভৃতি জেলায় ব্যাপক হারে এলএসডি ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে কয়েকটি উপজেলা এ রোগের হটস্পটে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় চুয়াডাঙ্গা জেলা, এমনকি ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের খামারিদেরও দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে এ রোগ।

জেলা-উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে গরু নিয়ে ভিড় করছেন কৃষক ও খামারিরা। কিছু উপজেলায় আক্রান্ত গরুর চিকিৎসায় মেডিকেল ক্যাম্প করা হচ্ছে। দ্রুত রোগটি ছড়িয়ে পড়ায় জনবলসংকটে সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের। ওষুধ বরাদ্দও অপ্রতুল বলে স্বীকার করেছেন তাঁরা।

এমন পরিস্থিতিতে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কার্যকর ভূমিকা জরুরি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও এর বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়কে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে কৃষক ও খামারিদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

মেডিকেল ক্যাম্পের সংখ্যা ও ওষুধ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সবচেয়ে জরুরি এ রোগ থেকে পশুকে নিরাপদে রাখতে কৃষক ও খামারিদের সচেতন করা। করোনা মহামারি মোকাবিলার মতো নানামুখী পরিকল্পনায় সমন্বিত পদক্ষেপ নিন।