যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্যানুযায়ী, ঈদে ঢাকা থেকে ৮০ লাখ মানুষ গ্রামে যাবেন, ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর যোগ করলে এই সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখে পৌঁছাতে পারে। চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শহর থেকেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ গ্রামে যাবেন। এটা একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ।
এই কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী কী পদক্ষেপ নেয়, তার ওপরই নির্ভর করছে বিপুলসংখ্যক মানুষের ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে, না বিপৎসংকুল। ইতিমধ্যে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। যাত্রীসাধারণের সুবিধার জন্য এবার সরকার ঈদের ছুটি এক দিন বাড়িয়েছে। ২৭ জুন ছুটি শুরু হয়ে চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। ১ জুলাই শনিবার থাকায় ছুটি কার্যত পাঁচ দিন হবে।
প্রতিবছর ঈদযাত্রার বিড়ম্বনার কারণ যাত্রীদের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা কম। বাস, ট্রেন, লঞ্চ—সর্বত্র ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই অবস্থা। ট্রেনকে সবচেয়ে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পরিবহন ভাবা হয়। যদিও বাংলাদেশে রেলওয়েকেই দুর্বল করে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি ট্রেনের সংখ্যা কিছুটা বাড়ানো হলেও প্রয়োজনের তুলনায় কম। ট্রেন সময়সূচি মেনে চললে যাত্রীদের ভোগান্তি কম হবে। সময়সূচি না মানা হলেও ভোগান্তির সীমা থাকবে না।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ঈদযাত্রায় মানুষ প্রধানত সড়ক ও নৌপথের ওপরই ভরসা করে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলে নৌপথে যাত্রীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ফলে অতীতে ঈদের সময় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হতো, সেটি এখন আর হবে না। তারপরও ঝড়বৃষ্টির মৌসুম বলে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন বলে মনে করি।
ঈদের সময় অনেক বেশি ও বিচিত্র ধরনের যানবাহন সড়কে নামানো হয় বলে যানজটের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ অবস্থায় সড়ক ব্যবস্থাপনা যদি ঠিকঠাকমতো না হয়, অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যানবাহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে। এ সুযোগে একশ্রেণির ছিনতাইকারী–ডাকাতও হামলে পড়ে। গত ঈদেও ডাকাতদের কবলে পড়ে অনেকে সর্বস্বান্ত হন। এবারও যাতে সে রকম কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে হাইওয়ে পুলিশকে সজাগ থাকতে হবে। সব সড়কেই সার্বক্ষণিক টহল বাড়াতে হবে।
যেসব সড়কে সংস্কারকাজ চলছে, ঈদের সময় সেসব সড়কে বাড়তি নজরদারি প্রয়োজন। বিশেষ করে ঢাকা–উত্তরাঞ্চল ও ঢাকা-সিলেটগামী সড়কে। বৃষ্টির কারণে কোনো সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে দ্রুত মেরামত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দূরযাত্রায় সড়কে কোনো অংশে যানজট দেখা দিলে তার প্রভাব পুরো সড়কে পড়ে। যাত্রীদের ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে যায়।
তবে মনে রাখতে হবে, কেবল সড়ক টেকসই থাকলেই দুর্ঘটনা রহিত হয় না। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে চালকের বেপরোয়া যান চালনা ও পথচারীদের অসতর্কতার কারণে। শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে একটি অ্যাম্বুলেন্স রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা খেলে আগুন লেগে যায় এবং সাত যাত্রীর সবাই মারা যান। মোটরসাইকেল চলাচলের ক্ষেত্রে যে নিয়মকানুন আছে, অনেকেই তা মানেন না। ফলে দুর্ঘটনার শিকার হন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ব্যক্তিদের আরও বেশি সজাগ থাকতে হবে। কোনো অবস্থায় অন্যকে টপকে যাওয়ার চেষ্টা করা যাবে না।
ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। পশুবাহী পরিবহন যতটা সম্ভব মূল সড়কগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। সড়ক-মহাসড়কের ওপর পশুর হাট বসানোর বদভ্যাসও ত্যাগ করতে হবে। কারও সুবিধার জন্য অন্যদের বিপদে ফেলা যাবে না। আমরা আশা করব, সড়ক, নৌ ও রেলওয়েতে যাঁরা চলাচল করবেন, তাঁরা সতর্ক থাকবেন। কেননা সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি।