সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

মেট্রোরেলে যাত্রীর চাপ

জনচাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে ট্রেন–কোচ বাড়ান

ঢাকা শহরের যানজটে ক্লিষ্ট মানুষের একমাত্র সহায় হয়ে উঠেছে মেট্রোরেল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় মেট্রোরেলের কোচের সংখ্যা এখনো কম। দুই ট্রেনের মধ্যে বিরতিও বেশ লম্বা। আগের তুলনায় মেট্রোরেলের চলাচলের সময় কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু মেট্রোরেলে যাঁরা নিয়মিত চড়েন, তাঁদের চাহিদা পুরো মিটছে না। প্রথম আলোর ‘মেট্রোরেলে যাত্রীর চাপ, ট্রেন কম’ প্রতিবেদনে এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে। কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলে এই সমস্যাগুলোর সমাধান অসম্ভব নয়।

যেমন উত্তরা থেকে মতিঝিল রুটে সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করার কথা। ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহনের কথা। এ জন্য পর্যাপ্ত ট্রেনও মজুত আছে। এই রুটের জন্য ২৪ সেট ট্রেন কেনা আছে। অথচ সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ছয়টি কোচ নিয়ে ট্রেনগুলো চলছে ১০ থেকে ১২ মিনিট বিরতিতে। কিন্তু প্রতিটি ট্রেনে আরও দুটো কোচ যুক্ত করে রাত ১২টা পর্যন্ত চালানো সম্ভব। দুই ট্রেনের মধ্যে বিরতিও কমিয়ে আনা যায়। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষের ধারণা, বইমেলা ও বাণিজ্য মেলার কারণে যাত্রী বেশি। এই মুহূর্তে কোচের সংখ্যা বৃদ্ধি, বিরতি কমানো বা ট্রেন চলাচলের সময় বাড়ালে পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ সংশয়ে আছে। কিন্তু যাত্রীরা বলছেন অন্য কথা।

দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো যায় বলে অনেকেই মেট্রোরেলকে বেছে নিয়েছেন। কি সকাল, কি বিকেল বা রাতে মেট্রোরেলের কোচগুলো যাত্রীবোঝাই হয়ে চলাচল করে। টিকিট কাউন্টারের সামনে দিনের বেশির ভাগ সময় সুদীর্ঘ লাইন দেখা যায়। প্রায় প্রতিটি কোচেই উপচে পড়া ভিড়। কারও কারও ধারণা, নারীদের জন্য নির্ধারিত কোচে যাত্রীসংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। এর প্রতিবাদে সেদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি শেয়ার করে দেখিয়েছেন নারীদের কামরাতেও ‘ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই’ অবস্থা। তা ছাড়া ঢাকা এখন গভীর রাত পর্যন্ত সচল থাকে। রাত সাড়ে ৮টার পরও বহু মানুষ যাতায়াত করেন।

এই যখন পরিস্থিতি, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের মনে পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ার সংশয় কেন, বোধগম্য হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা যদি প্রতিটি স্টেশনে গিয়েও মাথা গুনে ধারণা নিতে না পারেন, তাঁদের কাছে টিকিট বেচার হিসাব আছে। তাঁরা অনলাইনেও যুক্ত থাকেন। মাঠ যাচাই করলে বোধ করি এত দিনে আরও কোচ যুক্ত হতো, মেট্রোরেল আসতও ঘন ঘন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রগুলো প্রথম আলোকে জানিয়েছে, মূল সংকট দক্ষ জনবলের। প্রশিক্ষণ শেষে পূর্ণোদ্যম চলতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। আমরা চাইব, মেট্রোরেল দ্রুতই দক্ষ জনবলের ঘাটতি কাটিয়ে উঠবে। এ প্রশ্ন তো তোলাই যায়, যে প্রকল্প চূড়ান্ত রূপ পেতে প্রায় এক যুগ সময় লেগেছে, সেই প্রকল্পের জনবল প্রশিক্ষণ শুরু হতে এত দেরি হলো কেন? তা ছাড়া চালুর পরই প্রায় দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণেও ট্রেন চলেনি। এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। প্রতিটি স্টেশনেই নিরবচ্ছিন্নভাবে ট্রেন চলাচলের জন্য ব্যবস্থা আছে, তেমনটাই বলা হয়েছিল।

ঢাকায় বসবাসের কাফফারা হিসেবে নাগরিকদের কাঁড়ি কাঁড়ি সমস্যা নীরবে প্রতিদিন ভোগ করে যেতে হয়। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অসহনীয় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। ঢাকার ৭৩টি মোড়ে যানবাহন আটকে থাকে। এতে করে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। আর জ্বালানি পোড়ে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার। গত এক যুগের মেট্রোরেলের নির্মাণের সময়েও কষ্ট করেছেন নাগরিকেরা। তাঁরা যাত্রাপথে অন্তত কিছুটা স্বস্তির দাবিদার। আমরা আশা করব, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের চাহিদার কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।