সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

হুমকিতে পাহাড়ি পাড়া

চিম্বুকে পানিসংকটের দিকে নজর দিন

পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ ও জনজীবন নানাভাবেই হুমকির মুখে, তা কারও অজানা নয়। পাহাড়ে আকর্ষণীয় পর্যটনের আড়ালে থেকে যাচ্ছে সেখানকার মানুষের সমস্যা ও সংকট। শিক্ষা ও চিকিৎসার চরম অভাব তো সেখানে সব সময়ই ছিল, এখনো আছে। এখন সেখানে যুক্ত হয়েছে সুপেয় পানির সংকটও। এ সংকটের কারণে অনেক পাহাড়ি পাড়া উচ্ছেদের হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে বান্দরবানে চিম্বুক পাহাড়ে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কের ম্রোলংপাড়া থেকে জীবননগর পর্যন্ত ৩৩টি পাড়ায় প্রায় এক হাজার ম্রো পরিবারের বসবাস রয়েছে। সব কটি ম্রোপাড়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানির সংকট দিন দিন বেড়ে চলেছে। ২০ বছর আগেও এখানে পানির সংকট ছিল না। চিম্বুক পাহাড়ে ক্রমবর্ধমান পানির সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া না হলে আগামী ২০ বছরে এই পাহাড়ের অর্ধেক পাড়া উচ্ছেদের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

একসময় পাহাড়ে প্রাকৃতিক বনের আধিক্য ছিল। প্রাকৃতিক বনাঞ্চলই পাহাড়ের পানি ধরে রাখতে পারে। ফলে পাহাড়ের বাসিন্দাদের পানি নিয়ে দুশ্চিন্তাও ছিল না। পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল উজাড় করে ফলের বাগান তৈরির প্রবণতা শুরু হয়। বাঙালিদের সঙ্গে তাতে যুক্ত হন পাহাড়ি বাসিন্দারাও। বাগানের জন্যও পানির চাহিদা বাড়ছে। পাশাপাশি কাঠ ব্যবসার নামে স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে প্রাকৃতিক মাতৃগাছের বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে।

শুষ্ক মৌসুমে বা প্রচণ্ড গরমে পানির সংকট বেড়ে যায়। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ কিছুটা কমে। পানির ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি হয় নারীদের। পাহাড়ের পাদদেশের ঝিরি-ঝরনা থেকে পানি সংগ্রহ করতে দিনের অর্ধেক সময় ও শারীরিক শক্তির সবটা শেষ হয়ে যায়।

চিম্বুক পাহাড়ের পানির সংকট বাড়ার পেছনে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পরিকল্পনাহীনতা রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। আড়াই হাজার ফুট পাহাড়ের নিচ থেকে পানি তুলে চিম্বুক পাহাড়ের বিভিন্ন পাড়ায় সরবরাহ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। পাহাড়ের কয়েকটি উঁচু চূড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ করে পানি সংরক্ষণাগার (ট্যাংক) নির্মাণ করা গেলে সরবরাহ অনেকটা সহজ হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের মত।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বক্তব্য, চিম্বুক পাহাড়ে ঝিরি-ঝরনা শুকিয়ে যাওয়ায় সেখানে সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। তবে জেলার পানিসংকট নিরসনে একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২০২৮ সালে জেলায় পানির সংকট থাকবে না।

তার মানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হবে চিম্বুকের বাসিন্দাদের। নিঃসন্দেহে এর মধ্যে পানিসংকট আরও বাড়বে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে হতে বিদ্যমান পানি সরবরাহব্যবস্থা আরও কীভাবে কার্যকর করা যায়, সেটি বিবেচনা করা হোক।