সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বন্ধ ১০ স্টেশন

সাধারণ মানুষ কেন রেলের সেবাবঞ্চিত হবেন

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে রেল খাতে বড় বড় প্রকল্পের কমতি নেই। এই অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিঃসন্দেহে দেশের সড়কনির্ভর যোগাযোগব্যবস্থার বিপরীতে বিকল্প সুযোগ খুলে দিচ্ছে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী গণপরিবহন হিসেবে পরিচিত রেলের এই সুবিধা সাধারণ মানুষের দোরগোড়া থেকে ক্রমেই সরে যাওয়ার হতাশাজনক চিত্রও দেখা যাচ্ছে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, লোকবলসংকটে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলরুটে ৩১টি স্টেশনের মধ্যে ১০টি স্টেশনের কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এসব স্টেশনে স্টেশনমাস্টারের কক্ষ, বিশ্রামাগারসহ সব কক্ষ এখন তালাবদ্ধ রয়েছে।

বন্ধ থাকা স্টেশনগুলো হলো বগুড়ার পাঁচ পীর মাজার ও সৈয়দ আহমদ কলেজ; গাইবান্ধার সালমারা, ত্রিমোহনী, কুপতলা, নলডাঙ্গা ও হাসানগঞ্জ এবং রংপুরের চৌধুরানী, অনন্তনগর ও মহেন্দ্রনগর। এর মধ্যে হাসানগঞ্জ স্টেশনটি বন্ধ রয়েছে ১৫ বছর ধরে।

সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটে দিনে সাতটি ট্রেন চলাচল করে। এসব স্টেশনে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ট্রেন থামে না। স্থানীয় ব্যক্তিদের আন্দোলনের কারণে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ট্রেন থামলেও টিকিট কাটার ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করছেন। ফলে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। দীর্ঘদিন স্টেশনগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রেলওয়ের অবকাঠামো বিনষ্ট হচ্ছে ও ঝুঁকির মুখে পড়েছে সম্পত্তি। স্টেশন চত্বরে গড়ে উঠেছে দোকান। চুরি যাচ্ছে স্লিপার, লোহার নাট-বল্টু ও স্টেশনের খুচরা জিনিসপত্র।

এভাবে স্টেশনগুলো বন্ধ রাখা এবং সম্পত্তিগুলো ফেলে রেখে নষ্ট করার পেছনে কী যুক্তি থাকতে পারে, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করে যাত্রীসেবা নিশ্চিত না করে নতুন নতুন প্রকল্প কি রেল খাতে কোনো অর্থবহ পরিবর্তন আনতে পারবে?

সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলরুটের স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় সেখানকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপরও বাড়তি চাপ পড়ছে।

কেননা এসব এলাকার দরিদ্র মানুষেরা ব্যবসা, দিনমজুরিসহ নানা কাজে শহরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে স্বল্প খরচের ট্রেন বেছে নেন। রেলের কর্তাব্যক্তিরা স্টেশন বন্ধ থাকার কারণ হিসেবে লোকবলসংকটের সেই চিরাচরিত অজুহাত দাঁড় করাচ্ছেন।

আমরা আরেকটু গভীরে গিয়ে বুঝতে পারি, বছরের পর বছর ধরে রেল লোকসান গুনে আসছে তার সহজতম বলি এসব স্টেশন। কিন্তু প্রায় প্রতিটি ট্রেনে উপচে পড়া ভিড়ের পরও রেলওয়েকে কেন লোকসান গুনতে হয়, সেই প্রশ্নের উত্তর কী?

আমরা আশা করি, সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলরুটের বন্ধ স্টেশনগুলো দ্রুত চালু করার ব্যবস্থা নেবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।