সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ইসির ভূমিকা আরও প্রশ্নবিদ্ধ

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে নিবন্ধনের জন্য নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আবেদন আহ্বান করেছিল। তাদের উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৯৩টি দল আবেদন করেছিল। কিন্তু দিন শেষে দেখা গেল, দুটি ছাড়া আর কোনো দল নিবন্ধনের যোগ্যতা লাভ করেনি।

যে দুই দল নিবন্ধনের দুর্লভ গৌরব অর্জন করেছে, তারা হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। দুটি দলের নামের সঙ্গে বিএনপির নামের মিল আছে।

এর আগে আরও দুটি দল ইসির নিবন্ধন পেয়েছিল। তাদের আর কোনো যোগ্যতা না থাকলেও নেতারা একসময় বিএনপি করতেন। কথায় আছে, নামে নামে যমে টানে। এখান দেখা গেল, নামে নামে নিবন্ধনে টানে।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য যে তিন শর্ত পূরণ করতে হয়, তার প্রথম দুটি নতুন দলের জন্য প্রযোজ্য নয়। বাংলাদেশের যেকোনো জাতীয় সংসদে ন্যূনতম একটি আসন লাভ কিংবা যেসব আসনে নির্বাচন করেছে, সেখানে ন্যূনতম ৫ শতাংশ ভোট পাওয়া। তৃতীয় শর্তটি হলো দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় ও অন্তত ১০০টি উপজেলায় বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যালয় প্রতিষ্ঠা, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের তালিকাভুক্তি।

নির্বাচন কমিশন বলেছে, দুটি দলই উল্লিখিত শর্ত পূরণ করায় তাদের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। অন্য দলগুলো শর্ত পূরণ করেনি বলে নিবন্ধন পায়নি। এই বক্তব্য কতটা বিশ্বাসযোগ্য? যেসব রাজনৈতিক দল মাঠে তৎপর, নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে আসছে, তারা শর্ত পূরণ করেনি।

অথচ যে দলের কোনো তৎপরতা নেই, তারা শর্ত পূরণ করে ফেলেছে! একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, কার্যক্রম আছে কি না, সেটা নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দেখা হয় না; দেখা হয়, তাদের শর্ত অনুযায়ী অফিস ও কমিটি আছে কি না। এ জন্য নাকি তঁারা রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া তথ্য সরেজমিন যাচাই-বাছাইও করেছেন।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তাতে উল্লিখিত দুই দল নিবন্ধন পেতে পারে না। এদের অফিসগুলো স্থাপিত হয়েছে অস্থায়ীভাবে, কোনোটি আওয়ামী লীগ নেতা কিংবা বিশেষ সংস্থার লোকজন অফিস ভাড়ার ব্যবস্থা করেছেন। আর কমিটিতে যাঁরা আছেন, তঁারাও ক্ষমতাসীন দল কিংবা জাতীয় পার্টির লোকজন। নিবন্ধনপ্রত্যাশী ১০টি রাজনৈতিক দল সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ওই দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে এবং রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেওয়া দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া হয়নি।

নিবন্ধনপ্রত্যাশী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ এবং প্রথম আলোর অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যগুলো গুরুতর। নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে যেসব দল নিবন্ধন পেয়েছে এবং যেসব দল পায়নি, তাদের সমুদয় তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা। এটি তারা অনলাইনেও প্রকাশ করতে পারে।

যদি না করে, কেবল নিবন্ধনপ্রত্যাশী দল নয়, ইসির কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণের সন্দেহ ও অবিশ্বাস ঘনীভূত হবে। তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে না। নিবন্ধনের কাজটিও যদি সুষ্ঠুভাবে করতে না পারে, তা হলে তাদের এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে থাকার নৈতিক অধিকার আছে কি না, সেটাই প্রশ্ন।

আরেকটি বিষয়, ইসি নিবন্ধনের জন্য যেসব শর্ত আরোপ করেছে, নতুন দলের পক্ষে তা পূরণ করা প্রায় অসম্ভব। আবার পুরোনো অনেক দল ‘ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সরদার’ হয়েও নিবন্ধনের সুবিধা ভোগ করছে। এই বৈষম্য কোনোভাবে কাঙ্ক্ষিত নয়। নিবন্ধনের শর্ত কিছুটা নমনীয় করেও সক্রিয় নতুন দলগুলোর নিবন্ধিত হওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।