সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বীকৃতি

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করুন

জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে, যার সঙ্গে বাংলাদেশের গৌরব ও অর্জন জড়িত। ‘কমিউনিটিভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা: সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি’ শিরোনামের প্রস্তাবটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল।

১৭ মে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি পুস্তিকায় কমিউনিটি ক্লিনিককে স্বাস্থ্য খাতের বিপ্লব বলে অভিহিত করেছিল।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেশব্যাপী প্রতি ৬ হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে মোট ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের গিমাডাঙ্গা গ্রামে প্রথম এই ক্লিনিক উদ্বোধন করেন।

২০০১ সালের মধ্যে ১০ হাজার ৭২৩টি অবকাঠামো স্থাপনপূর্বক প্রায় ৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু করা হয়। এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের কাজ শুরু করে। বর্তমানে ১৪ হাজার ১৫৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ১৪ হাজার ১২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টিসেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে।

কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এটি সরকার ও জনগণের সম্মিলিত অংশীদারত্বের একটি সফল কার্যক্রম, যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা জমি দেন ও প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায়ও ভূমিকা রাখেন। অন্যদিকে কর্মী নিয়োগসহ ক্লিনিক পরিচালনার সব খরচ সরকার বহন করে। ক্লিনিক থেকে মা, নবজাতক ও অসুস্থ শিশুর সমন্বিত সেবা (আইএমসিআই), প্রজননস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা এবং সাধারণ আঘাতে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

প্রতিটি ক্লিনিকে শিশু ও মায়েদের টিকাদানের ব্যবস্থা আছে। ক্লিনিকে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগ শনাক্ত করা হয়। স্বাস্থ্যশিক্ষার পাশাপাশি দেওয়া হয় পুষ্টিশিক্ষা। বয়স্ক, কিশোর-কিশোরী ও প্রতিবন্ধীদের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হয়। ক্লিনিক থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়াও শিশুদের অণুপুষ্টিকণার প্যাকেট দেওয়া হয়। গত মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনা পয়সায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইনসুলিন দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।

স্বাস্থ্যসেবায় এ ধরনের একটি মহৎ উদ্যোগের বৈশ্বিক স্বীকৃতি বাংলাদেশের বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে আমাদের এখানেই থেমে থাকলে হবে না। যেতে হবে আরও বহুদূর। ১৯৭৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আলমাআতা সম্মেলনে ২০০০ সালের মধ্যে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ ঘোষণা এসেছিল। বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের সাফল্য থাকলেও স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক চিত্র মোটেই ভালো নয়।

সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর লোকবল ও অবকাঠামোগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শহর ও গ্রামাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষগুলোর কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে হবে। আর সে জন্য স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি এর যথাযথ ব্যয়ও নিশ্চিত করতে হবে।