সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

জাতীয় চিড়িয়াখানা

শিশুটি কীভাবে হায়েনার খাঁচার কাছে গেল

জাতীয় চিড়িয়াখানায় ব্যবস্থাপনা কতটা নাজুক হয়ে পড়েছে, তার একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল গত বৃহস্পতিবারের ভয়াবহ ঘটনাটি। মা-বাবার সঙ্গে চিড়িয়াখানার পশুপাখি দেখতে গিয়ে হায়েনার কামড়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে দুই বছরের শিশু সাইফ। শিশুটি শঙ্কামুক্ত হলেও ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অথচ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাবেষ্টনী পেরিয়ে হায়েনার মতো হিংস্র একটি প্রাণীর খাঁচার একেবারে কাছে শিশুটির যাওয়ার কোনো সুযোগই নেই।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার সকালে মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া শিশু সাইফ রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় হায়েনার খাঁচার কাছে চলে গিয়েছিল। তার ছোট্ট হাতের আঙুল খাঁচার নেটের ভেতরে ঢুকতেই হায়েনা কামড়ে ধরে। হাত বাঁচাতে টানাটানি চললেও একপর্যায়ে শিশুটির কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আহত শিশুটিকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এখন শিশুটির চিকিৎসা চলছে।

চিড়িয়াখানায় প্রাণীরা যেখানে থাকে সেখানে একটি; এরপর আরেকটিসহ দুটি নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া থাকে। দর্শনার্থীরা দ্বিতীয় বেষ্টনীর বাইরে থেকে প্রাণী দেখেন। ঘটনাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রথম নিরাপত্তাবেষ্টনী খোলা থাকায় এবং অভিভাবকের অসতর্কতায় শিশুটি হায়েনার খাঁচার কাছে চলে এসেছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, হিংস্র প্রাণীর খাঁচার নিরাপত্তাবেষ্টনী কেন এভাবে খোলা ছিল?

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষও যে ভাষ্য দিয়েছে, তাতে হায়েনার খাঁচার নিরাপত্তাবেষ্টনী খোলা থাকার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। তাঁরা বলছেন, নিরাপত্তাবেষ্টনীর দরজা খোলা হয় সাধারণত যখন স্টাফরা প্রাণীর খাঁচায় খাবার নিয়ে প্রবেশ করেন। হায়েনার খাঁচায় খাবার দেওয়া হয় বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টার মধ্যে। কিন্তু ঘটনাটি ঘটেছে বেলা ১১টার সময়। ফলে কারও না কারও গাফিলতির খেসারত অবুঝ শিশুটিকে দিতে হয়েছে।

বিষয়টি তদন্তে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তরফে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আমরা আশা করি, তদন্তে বেরিয়ে আসবে কার বা কাদের গাফিলতিতে ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছে এবং কৃতকর্মের জন্য দোষীকে যথার্থ বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে। কিন্তু ছোট্ট সাইফের কবজি বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা নিছক বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা হিসেবে দেখলে তা হবে মহা ভুল। এতে চিড়িয়াখানার সামগ্রিক অব্যবস্থাপনার চিত্র তাতে আড়াল করা হবে।

গণমাধ্যমে চিড়িয়াখানা নিয়ে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তাতে এটা স্পষ্ট যে প্রাণীদের সঙ্গে কোনো অর্থেই সংবেদনশীল আচরণ করা হয় না। আধুনিক চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের খাঁচায় বন্দী করে প্রদর্শন করা হয় না, সেটা প্রাণীদের মুক্ত বিচরণক্ষেত্র।

চিড়িয়াখানায় যেসব দর্শনার্থী যান, তাঁদেরও সচেতন থাকা প্রয়োজন। কৌতূহলবশত কিংবা অসতর্কতাবশত কোনো প্রাণীকে বিরক্ত করা কিংবা প্রাণীর খাঁচার কাছে চলে যাওয়া মোটেই উচিত নয়।

সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ও দর্শনার্থী সবার জন্যই সতর্ক হওয়ার বার্তা।