রেশম বীজাগারের করুণ দশা

কর্তৃপক্ষের চরম ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ

স্বনির্ভর অর্থনীতির জন্য রাষ্ট্রীয় বা সরকারিভাবে পরিচালিত উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানের কমতি নেই আমাদের। বিভিন্ন কলকারখানা, পণ্য উৎপাদন কেন্দ্র, গবেষণাকেন্দ্রের হিসাব কষতে বসলে সেই তালিকা হবে দীর্ঘ। স্বতন্ত্র করপোরেশন বা বোর্ডের অধীন সেসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখতে পারছে? কেন লোকসান দিতে দিতে একের পর এক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়? পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত রেশম বীজাগারের করুণ অবস্থা দেখলে এমন প্রশ্নই সামনে আসে। একসময়ের লাভজনক প্রতিষ্ঠানটির দিকে তাকালে যে কারোরই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসবে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৬২ সালে উপজেলার অরণকোলা এলাকায় ১০৭ বিঘা জমির ওপর রেশম বীজাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৫৯ বিঘা জমিতে আবাদ করা হয় তুঁতগাছ। আর বাকি জমিতে কী নেই? অফিস, আবাসিক ভবন, পশু পালন ঘর, তাঁতঘরসহ ১৯টি ভবন ও ৪টি পুকুর তৈরি করা হয়। ফার্ম ব্যবস্থাপকসহ বিভিন্ন পদে ১৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শতাধিক শ্রমিকের কর্মচাঞ্চল্যতায় মুখর বিশাল প্রতিষ্ঠানটি এখন যেন ‘ভূতের আখড়ায়’ পরিণত হয়েছে। কোথাও কোনো জনমানবের চিহ্ন নেই।

এ বীজাগারে উৎপাদিত হতো বিপুল পরিমাণ সুতা। সেই সুতা সরবরাহ করা হতো রাজশাহীর সিল্কপল্লিতে। কিন্তু লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি হঠাৎ লোকসানে পড়া শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে পড়া সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যে অভিযোগ পাওয়া যায়, এখানেও তা দেখা যায়। কর্মকর্তাদের অযৌক্তিক আচরণ ও উদাসীনতা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের মধ্যে তৈরি হয় বিরোধ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে শ্রমিকদের বেতন পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তারাও অন্যত্র চলে যান। এর পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির ক্ষয় শুরু হয়। অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হয় ৫০ হাজার তুঁতগাছ। ভবনগুলোও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে, এখন নষ্ট হতে চলেছে। অনেক জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। পুকুরগুলো আবর্জনায় ভরে গেছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের এমন দশায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হন শ্রমিকেরা। এখানেও দেখা যাচ্ছে, ৩০ বছর কাজ শেষে অবসরে যাওয়ার সময় খালি হাতে বিদায় নিতে হয়েছে শ্রমিকদের। তাঁদের অনেকে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের চরম ব্যর্থতাই প্রকাশ পায় এই বীজাগারকে ঘিরে। শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, এখনো এখানে সম্ভাবনা আছে। কর্তৃপক্ষ একটু নজর দিলে প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক করা সম্ভব। এখন কথা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ কি আদৌ প্রতিষ্ঠানটির দিকে নজর দেবে? সেটা এখন সদিচ্ছার ওপরই নির্ভর করবে।