রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া আমাদের দেশে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এবার রোজার আগেই প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে যেসব ভোগ্যপণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এ জন্য বৈশ্বিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের দোহাই দেওয়া হলেও দেশি পণ্যের দাম কেন বাড়ল, সেই প্রশ্নের জবাব নেই।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, দেশে গত বছর রমজান মাসের প্রথম দিন প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। এবারের রোজার আগে সেই চিনি বিক্রি হচ্ছিল প্রতি কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ৩৭ থেকে ৪০ টাকা। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, সাধারণত দেশে প্রতি মাসে গড়ে দেড় লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। রমজান মাসে লাগে তিন লাখ টন।
শুধু চিনি নয়; ময়দা, খেজুর, ছোলা, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, মাছ, মাংস ও ডিমের চাহিদাও বেশি থাকে। এ সুযোগে একশ্রেণির ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আজ শুরু হওয়া রোজায় আরও দাম বাড়বে, যদি না সরকার তদারকি জোরদার করে।
আমদানি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ডলার ও বৈশ্বিক বাজারের দোহাই দেওয়া হলেও দেশে উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে তো সেই কথা খাটে না। তারপরও ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা বিক্রি হওয়া অস্বাভাবিক। গত এক বছরে এমন কী ঘটনা ঘটল যে মুরগির দাম দেড় গুণ বেড়ে যাবে।
এর পেছনে উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে। নানা মহলের সমালোচনার মুখে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তাদের খামার থেকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-১৯৫ টাকায় বিক্রি করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করি, অন্যান্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানও তাদের অনুসরণ করবে।
পৃথিবীর সব দেশেই উৎসব-পার্বণে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কিছুটা কমিয়ে দেন ভোক্তাসাধারণের সুবিধার জন্য। কিন্তু আমাদের দেশে অসাধু ব্যবসায়ীরা রোজা-ঈদকে নেন বাড়তি মুনাফা আদায়ের মওকা হিসেবে। বাজার পর্যবেক্ষণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর দুর্বলতার কারণে তাঁরা স্বেচ্ছাচারী কায়দায় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন।
কেবল রোজার সময় নয়, সারা বছর যেভাবে একের পর এক পণ্যের দাম বেড়েছে, তাতে দরিদ্র মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষও হিমশিম খাচ্ছেন। রোজায় দাম বাড়লে তাঁদের কষ্ট যে আরও বাড়বে, সন্দেহ নেই।
রোজায় পণ্যের দাম বাড়বে, এ আশঙ্কা বিভিন্ন মহল থেকে আগেই করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না। বাণিজ্যমন্ত্রী দাম বাড়বে না বলে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু তঁার কথা ব্যবসায়ীরা কতটা আমলে নেবেন, সেটাই প্রশ্ন। ইতিমধ্যে যে হারে দাম বাড়ানো হয়েছে, তাতে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষকে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
রোজা মাত্র শুরু হয়েছে, এখনো যদি সরকার তদারকি জোরদার করে এবং টিসিবির মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়, তাহলে এ মানুষগুলো কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সেলিম রায়হানের ভাষায় বলতে হয়, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করুক।