সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

জাহাঙ্গীরনগরকে বৃক্ষশূন্য করার আয়োজন কেন

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রকৃতির আধার বলা যায়। এখানে উচ্চশিক্ষাটা শুধু শ্রেণিকক্ষেই হয় না, প্রকৃতিও যেন সেখানকার শিক্ষক। কিন্তু সবুজ ক্যাম্পাসগুলো যেন দিন দিন বিরানভূমি হতে চলেছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকৃতির মাঝখানে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়, তা পুরোপুরি ব্যর্থ হতে চলেছে।

অপরিকল্পিত অবকাঠামোমূলক উন্নয়নের ফলে সেগুলো হয়ে উঠছে কংক্রিটের জঙ্গল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে অসংখ্য গাছ কেটে, বন–জঙ্গল সাফ করে একের পর এক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, আরও কিছু নির্মাণাধীন।

এর মধ্যে একটি নতুন ভবনের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে, যার জন্য পাঁচ শতাধিক গাছ কাটা হতে পারে। যে সময় গাছ কাটার বিরুদ্ধে মানুষ সরব, সেখানে এমন গাছ কাটার আয়োজন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণবৈচিত্র্যে ভরপুর এলাকায় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ-জেইউ) জন্য নতুন ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সবুজে ঘেরা এলাকাটিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে শালগাছ। আইবিএ নিজস্ব অর্থায়নে ভবনটি নির্মাণ করছে।

তাদের বক্তব্য, তাদের ৮ বিঘা জমি দেওয়া হলেও সেখানে প্রাথমিকভাবে ১৮ কাঠা জমির ওপর ভবন করা হবে। এতে ১৫০টির মতো গাছ কাটা হতে পারে। এটি খুবই দুঃখজনক যে একটি গাছও না কেটে যে অবকাঠামো নির্মাণ করা যায়, এমন চিন্তাই আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি।

গাছ না কেটে যেভাবে সম্ভব, সেভাবে ভবন করার জন্য বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই এলাকায় অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছপালা বেশি দৃশ্যমান ওই অঞ্চলেই।

সেখানকার শালগাছগুলো অন্তত কাটা উচিত হবে না। ওই এলাকায় প্রচুর গুইসাপ, কাঠবিড়ালি, শিয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আর প্রজাপতি আছে। গাছগুলো কাটা হলে এসব প্রাণী হুমকির মুখে পড়বে।

১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের একটি প্রকল্পে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে। এই উন্নয়ন প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠলেও তা কোনোভাবেই রোধ করা যায়নি।

এত বিপুল অর্থের প্রকল্প নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, যার বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গাছ রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। আমরা আশা করব, আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবে। আইবিএ ভবনের জন্য অন্য কোথাও জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হোক।