সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করবে, এটি অনেকটা মামুলি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রান্তিক এলাকায় প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে মাঝপথে ঠিকাদার লাপাত্তা, এমন খবর দেখতে আমরা যেন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। রাজধানী, বিভাগীয় বা জেলা শহরগুলোয় বসে বড় ঠিকাদারেরা প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিলেও নিজেরা তা করেন না। কাজ দিয়ে দেন আরেক ঠিকাদারকে, যাকে বলা হয় সাবকন্ট্রাক্ট। এ কারণে অনেক প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। যেমনটি দেখা যাচ্ছে পাবনার ঈশ্বরদীর একটি সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে। বিষয়টি খুব দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চর কুরুলিয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া শাখা পদ্মার ওপর এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০২১ সালে নেওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় আট কোটি টাকা। সেতুটির কাজ পায় যশোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইসিএল প্রাইভেট লিমিটেড। তবে প্রতিষ্ঠানটি নিজে কাজ না করে স্থানীয় কিছু ঠিকাদারকে দিয়ে কাজটি করাচ্ছিল। ২০২২ সালের ৮ অক্টোবরের মধ্যে এ সেতু নির্মিত হওয়ার কথা ছিল।
দেখা যাচ্ছে, ঠিকাদার সেতুর দুটি পিলার ও দুই পাশের সংযোগ সড়কের গাইডওয়াল তৈরি করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এরপর মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকাদার আর কাজে আসেননি। পরে দুই দফা মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও সেতুটির নির্মাণকাজ আর শুরু হয়নি। ইতিমধ্যে ঠিকাদার কাজের ৫৫ শতাংশ বিলও তুলে নিয়েছেন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের চর কুরুলিয়া, চর গরগরি, মাধপুর, চর কাতরা, চর প্রতাপপুর, কামালপুরসহ আশপাশের প্রায় ১০ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বর্ষায় তাঁরা নৌকায় ঘাট পার হতে পারলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদার সেতুটির ৩০ শতাংশ কাজও শেষ করেননি। অথচ যে পরিমাণ কাজ হয়েছে, তার চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ কাজের বিল ঠিকাদারকে দিয়ে দিয়েছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদারের সঙ্গে এলজিইডি কর্মকর্তাদের কী এমন সখ্য, কাজের চেয়েও বেশি বিল তুলে দিতে হবে তাঁদের হাতে? যদিও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে, সেতুটির ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবি বলছে, এক বছরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন বছর পেরিয়ে সেখানে এখন শুধু দুটি পিলার দাঁড়িয়ে আছে।
স্থানীয় ঠিকাদারদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সেতুটির নির্মাণকাজ নিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এমনটিই জানা যাচ্ছে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে, ঠিকাদারদের আর সময় দেবে না তারা। খুব দ্রুতই সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আমরা দেখতে চাই দ্রুত সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করতে কী উদ্যোগ নেয় তারা। মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটি আমরা জানতে চাই।