সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ক্ষমতাসীনদের দ্বন্দ্বে মেলা কেন বন্ধ হবে

গ্রামীণ মেলা আমাদের আদি সংস্কৃতির অংশ। দেশের আরও অন্যান্য এলাকার মতো বৈশাখ মাসে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতেও একটি মেলা বসে। এটির আলাদা একটি গুরুত্ব হচ্ছে অস্কারজয়ী ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ির ভিটায় বসে এ মেলা বসে, তা-ও ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে। এবার স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতাদের দ্বন্দ্বে এ বছর সেই মেলা বসেনি। এতে মেলার নিয়মিত দর্শনার্থীরা হতাশা ও স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষেরা ২০০ বছর আগে কালভৈরব পূজাকে উৎসবের মাত্রা দিতে এ বৈশাখী মেলার প্রচলন করেন। প্রতিবছর বৈশাখের শেষ বুধবার থেকে সাত দিনব্যাপী এ মেলা চলে। আর কে না জানে, বৈশাখী মেলা মানেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সব জিনিস বেচাকেনার অন্যতম স্থান। ফলে বিশাল এলাকাজুড়ে চলা এ মেলাকে ঘিরে বসে অনেক দোকানপাট। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মেলায় আসেন। কবি-সাহিত্যিকদের আগমন ঘটে মেলায়, হয় কবিতা পাঠ ও সাহিত্যচর্চা। সব মিলিয়ে এ মেলা হয়ে উঠেছে কটিয়াদীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ।

গ্রামে গ্রামে ক্ষমতাচর্চা কতটা শিকড় গেড়েছে, তার একটি ছোট্ট নমুনা হচ্ছে এ বছর মেলাটির ধারাবাহিকতার ছেদ পড়া। এত দিন স্থানীয় লোকজন মিলেমিশে মেলা পরিচালনা করে আসছিলেন। তবে গত কয়েক বছরে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এক ইউপি সদস্য সেটির নেতৃত্ব নেন। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মেলায় প্রভাব বিস্তার করতে চান ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে মেলা বসানোর অনুমতি না দিতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তিনি আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনও এবার মেলা বসানোর অনুমতি দেয়নি।

যুবলীগ নেতার দাবি, মেলাকে ঘিরে সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াতে তিনি এমন আবেদন করেছেন। কথা হচ্ছে সহিংসতা করবেন কারা? তিনি নিজেকেও কি এর অন্তর্ভুক্ত করছেন না? মেলা বন্ধের এ আবেদনের মাধ্যমে সহিংস পরিস্থিতি তৈরির একপ্রকার হুমকিও দেওয়া হলো না? স্থানীয় লোকজন বলছেন, দুই পক্ষের মধ্যে বনিবনা হয়ে গেলে মেলা বসা নিয়ে কোনো সমস্যা থাকবে না। আর স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিলেই সেটি সম্ভব।

করোনা মহামারি ছাড়া এর আগে কখনো এ মেলা বন্ধ হয়নি। এবার স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতাদের বিরোধে এমনটি ঘটল। কথা হচ্ছে, যে মেলা এত দিন স্থানীয় লোকজন পরিচালনা করে আসছেন, সেখানে কেন ক্ষমতাসীন নেতারা বাগড়া দেবেন? তাঁদের ব্যক্তিগত স্বার্থ ও দ্বন্দ্বের কারণে ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা কেন বন্ধ হয়ে যাবে? আমরা চাই স্থানীয় প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় লোকজনকে নিয়েই এ মেলার আয়োজন হোক।