সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সংগঠক ও স্বেচ্ছাসেবকদের অভিবাদন

বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারের জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষ আছে। কিন্তু কোনো প্রাণী লোকালয়ে চলে এলে বা কোথাও আটকে পড়লে সেটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। আইনের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় মানুষ অসচেতনতার কারণে ও ভীত হয়ে প্রায়ই এ কাজ করেন।

স্থানীয় প্রশাসন বা সরকারি কর্তৃপক্ষ সেখানে উপস্থিত হওয়ার আগেই দেখা যায় প্রাণীটিকে মেরে ফেলা হয়েছে। কয়েক দিন পরপর নীলগাই বা মেছো বাঘ হত্যার সংবাদ শিরোনাম হয়। বিষয়টি এখন এমন পর্যায়ে চলে গেছে, সেখানে বিশাল শরীরের হাতি পর্যন্ত মেরে ফেলা হচ্ছে।

এতে জড়িয়ে পড়েছে প্রাণিশিকারি ও চোরা কারবারিরাও। ফলে বন্য প্রাণী হত্যা, শিকার ও পাচার বন্ধ করার জন্য সবার আগে সচেতন করতে হবে স্থানীয় মানুষকে। পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এমন এক সংগঠন করেই দারুণ সফলতা দেখিয়েছে স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ডলাইফ (সিউ)। গত ছয় বছরে সংগঠনটি প্রায় ৪০০ বন্য প্রাণী উদ্ধার করেছে।

্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বন্য প্রাণী সংরক্ষক ও আলোকচিত্রী খোকন থৌনাউজম ও সোহেল শ্যাম, এ দুজন মিলে সিউ প্রতিষ্ঠা করেন। দুজনই থাকেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। একটি শালিক পাখি উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁদের পরিচয় হয়েছিল।

সেই থেকে একসঙ্গে নেমে পড়লেন বন্য প্রাণী উদ্ধারে। যখন কোনো বন্য প্রাণী বিপন্ন হওয়ার খবর পেয়েছেন, সেখানেই ছুটে গিয়েছেন এবং সেটিকে উদ্ধার করেছেন। এরপর কোনো প্রাণীকে বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছেন অথবা সুস্থ করে তুলে নিজেরাই মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, সচেতনতার কাজটি তাঁরা গুরুত্বের সঙ্গে করছেন। ফলে কিশোর-তরুণেরা কোনো এলাকায় বিপদগ্রস্ত বন্য প্রাণীর তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন।

বন্য প্রাণী উদ্ধারের কাজটা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের, অলাভজনকভাবে করছে সিউ। বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকেও সংগঠন সার্বিক সহযোগিতা পায়। শুরুতে সংগঠক ও স্বেচ্ছাসেবকদের পরিবার বিষয়টিকে ভালো চোখে না দেখলেও এখন সংগঠনটির কথা সবাই জানে, ঘরে-বাইরে প্রশংসিত হচ্ছে।

বর্তমানে সিউর মাধ্যমে ১২ জন স্বেচ্ছাসেবী সরাসরি উদ্ধারকাজে যুক্ত আছেন। সিউর সংগঠকদের একটিই কথা, শুধু আইন করেই পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। এর জন্য স্কুল-কলেজে গিয়ে গিয়ে এ ব্যাপারে আগামী প্রজন্মকে সচেতন করার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা।

বন্য প্রাণীর জন্য দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে এ ভূখণ্ড। অনেক প্রাণী ইতিমধ্যে বিপন্নপ্রায় হয়ে গেছে। সেগুলো বাঁচাতে এলাকায় এলাকায় এ ধরনের সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য থৌনাউজম ও সোহেল শ্যাম হতে পারেন বড় অনুপ্রেরণা। আমরা তাঁদের অভিবাদন জানাই।