সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ব্যয়ের বেশি টোল আদায়

নাগরিকের ওপর আর্থিক চাপ আর কত

সরকারি–বেসরকারি খরচে নির্মাণ করা হয় সেতু। টোল আদায়ের মাধ্যমে নাগরিকই সেতুর নির্মাণ ব্যয় পরিশোধ করেন। এখন সেই টোল আদায়ের পরিমাণ যদি নির্মাণব্যয় থেকে বহুগুণ হয়, তাহলে নাগরিকের পকেট থেকেই তার জোগান দিতে হয়। দেশে ২৬টি সেতুর ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এসব সেতুর টোল আদায়ের বিষয়টি সমন্বয় করা দরকার। কারণ, পরিবহন ব্যয় এতে বেড়ে যাচ্ছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু দুটির নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। তিন দশক আগে চালু হওয়া সেতু দুটি থেকে সরকার গত আগস্ট পর্যন্ত টোল বাবদ আয় করেছে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এত আয়ের পরও টোল থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। এ দুটি সেতুর মতো দেশের ২৬টি সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের বহুগুণ উঠে গেলেও সেগুলোর ওপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের ওপর টোল আদায় চলছেই। দু-একটি সেতু বড়, বেশির ভাগই মাঝারি।

টোলের কারণে যানবাহনের ভাড়া বেশি পড়ে এবং পণ্য পরিবহনের ব্যয় বেড়ে যায়। টোল অনেকটা পরোক্ষ করের মতো, যা গরিবের কাছ থেকে ধনীদের সমান হারে আদায় করা হয়। ধনী ও সচ্ছলদের কাছ থেকে যথেষ্ট পরিমাণে আয়করের মতো প্রত্যক্ষ কর আদায়ে মনোযোগী হতে হবে সরকারকে। বিগত সরকার সেখানে বড় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিল। টোল আদায় বন্ধে বিগত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে বিক্ষোভও হয় অনেক জায়গায়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরও এমন বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কোনো সুরাহা আমরা দেখতে পাই না।

সওজের কর্মকর্তারা বলে থাকেন, সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণে যে খরচ হয়, তা মেটানোর জন্য সরকার টোল আদায় করে থাকে। কিন্তু নির্মাণ ব্যয়ের কয়েক শ গুণই যদি টোল আদায় হয়, তা শুধু রক্ষণাবেক্ষণের খরচের বিষয় থাকে না; এটি স্পষ্ট সরকারের আয়ে পরিণত হয়। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কাছে ইজারা দিয়ে তাঁদের পকেট ভারী করে দেওয়ার সুযোগও বলা যায় এ টোল আদায়কে। জনগণই এসব সেতুর নির্মাণ ব্যয় বহন করছে, মাঝখান দিয়ে শত শত কোটির মালিক বনে যাচ্ছেন কিছু রাজনৈতিক নেতা। এমন অযৌক্তিক ব্যবস্থার অবসান হওয়া জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সীমিত হারে টোল রাখা যেতে পারে, বাকি সেতুগুলোকে টোলমুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। রাজস্ব আদায়ের জন্য সম্পদশালীদের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায় ও করযোগ্য মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টির দিকে সুনজর দেবে।