মরিচের ঝাল ও পেঁয়াজের ঝাঁজ

কোথায় গিয়ে থামবে বাজারের ঊর্ধ্বগতি

কাঁচা মরিচের ঝাল ও পেঁয়াজের ঝাঁজে সীমিত আয়ের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। শুকনা মরিচের দাম বেশি থাকায় অনেকে কাঁচা মরিচে ভরসা করতেন। কিন্তু সেই এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম যখন ৩০০ টাকা ছুঁই ছুঁই করছে, তখন তাঁরা নিরুপায়। 

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারে ২৮০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও পণ্যটির দাম ছিল ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দাম বেড়েছে ।

একই কথা প্রযোজ্য পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও। বছরের শুরু থেকেই দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বাড়লেও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা মূল্যবৃদ্ধি মোটেই স্বাভাবিক নয়। বাজারে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। আগে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লে ভারত থেকে আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল করা হতো। কিন্তু এবার ভারতের পেঁয়াজের দামও বেশি। উৎপাদন কম হওয়ার কারণ দেখিয়ে প্রথমে দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে আমদানির অনুমতি দিলেও শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে।

পাশাপাশি চালের দামও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির ঈদে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং চালকল বন্ধ থাকায় প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় চালের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। 

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। বাজারভেদে বেগুন বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। দিন দশেক আগেও এর দাম ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। কাঁকরোলের দাম ৩০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা এবং করলা ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ২০ থেকে ৪০ টাকা দাম বেড়েছে বরবটি, টমেটো ও গাজরের।

ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার জন্য সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টি ও মৌসুমি বন্যার দোহাই দিচ্ছেন। কিন্তু বন্যা তো সারা দেশে হয়নি। সিলেট অঞ্চলের বন্যার কারণে সারা দেশে সবজির দাম এতটা বেড়ে যাওয়ার যুক্তিসংগত কারণ নেই। এর পেছনে মহলবিশেষের কারসাজি আছে। প্রতিবারই তারা তক্কে তক্কে থাকে, কীভাবে দাম বাড়িয়ে ক্রেতা তথা ভোক্তাদের পকেট কাটা যায়। 

মুক্তবাজার অর্থনীতি মানে যা খুশি তা করা নয়। বাজারের ওপর সরকারের যে তদারকি থাকার কথা, সেটি পুরোপুরি অনুপস্থিত। ঈদের সময় সরকারের মন্ত্রী-আমলারা কিছুটা নড়েচড়ে বসেছিলেন। বিভিন্ন বাজারে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কিছু তৎপরতাও দেখা গিয়েছিল। ঈদের পর সবাই নীরবতা পালনকেই শ্রেয় মনে করেছেন।

এই সুযোগে স্বার্থান্বেষী মহল তথা সিন্ডিকেট ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে চলেছে প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাজেট বক্তৃতায় আশা প্রকাশ করেছিলেন, বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি কমবে। কিন্তু যেভাবে প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে, তাতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের অজানা নয় যে নিত্যপণ্যের ক্রমাগত দাম বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষেরা খুবই কষ্টে আছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের উচিত বাজার তদারকির পাশাপাশি টিসিবির মাধ্যমে কম দামে চাল-ডাল-ভোজ্যতেলের মতো পণ্যগুলোর সরবরাহ বাড়ানো। এতে হতদরিদ্র মানুষগুলোর জীবনযাপনের কষ্ট কিছুটা হলেও কমবে।