গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
তবে নির্বাচনটি যথার্থ অংশগ্রহণমূলক হয়েছে, এ কথা বলা যাবে না। দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অনেক দলই অংশ নেয়নি। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে ইসির দাবি ও সন্তুষ্টি অধিক গ্রহণযোগ্যতা পেত।
এই প্রেক্ষাপটে ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। গাজীপুরের মতো ওই চার সিটিতেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার সংস্থার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিটি নির্বাচন নিয়েও খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল চার সিটিতে আরও শক্ত (স্ট্রং) অবস্থান নেওয়ার কথা বলেছেন। নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা বলেছেন, আসন্ন চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরিস্থিতি যদি দাবি করে, তাহলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আরও কঠোর হবে। নির্বাচনী কেন্দ্রে সিসিটিভি বসানো হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত মাঠ সমতল করা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। কিন্তু গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী নির্বিঘ্নে প্রচার চালালেও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সেটি পারেননি বলে অভিযোগ ছিল। একই অভিযোগ এসেছে সিলেট সিটি করপোরেশনেও। সেখানে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ১২ জন সংসদ সদস্য মাঠে নেমেছেন, যা আচরণবিধির লঙ্ঘন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর বিরুদ্ধেও। প্রথম আলোয় এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন দুই প্রার্থীকে কৈফিয়ত তলব করেছে।
আশার কথা, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থাপনা অনেকটা পক্ষপাতমুক্ত ছিল। তবে এর জন্য ইসির কৃতিত্ব বেশি না নতুন মার্কিন ভিসা নীতির ভূমিকা বেশি, সেই প্রশ্নও এসেছে। নির্বাচনের আগের দিন নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়, যাতে বলা হয়েছে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে যারা বাধা সৃষ্টি করবে, তাদের সেই দেশে ভিসা পাওয়া কঠিন হবে। এই নীতি ঘোষণার পর স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা সতর্ক ছিলেন।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা গাজীপুরের ভোটের ফলাফলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এবং বাকি চার সিটিতে নিজেদের প্রার্থীকে জয়ী করতে সর্বশক্তি নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন।
চার সিটির মধ্যে বরিশালে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রকট। দফায় দফায় কেন্দ্রীয় নেতারা বরিশাল গিয়েও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারেননি। বরিশাল সিটি করপোরেশনে এবার প্রার্থী হয়েছেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর চাচা। নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে সাদিক অনুসারীদের কয়েক দফা সংঘর্ষও হয়েছে।
অন্য তিন সিটিতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা তেমন জানা যায়নি। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কিংবা কোনো প্রার্থীর সমর্থকদের বেপরোয়া আচরণ যাতে নির্বাচনী পরিবেশকে ব্যাহত না করে, সে বিষয়ে ইসিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনী প্রচার থেকে ভোট গ্রহণ—প্রতিটি স্তরে সব প্রার্থীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এর অন্যথা হলে গাজীপুরে ইসির সীমিত ‘সাফল্যই’ কেবল ম্লান হবে না, নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।