সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে মৃত্যু

পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতকে বাংলাদেশের পর্যটনের প্রধান কেন্দ্রস্থল বলা যায়। যেকোনো উৎসব উপলক্ষে, এমনকি মৌসুম ছাড়াও সেখানেই পর্যটকের সমাগম হয় বেশি। কিন্তু নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতির কারণে সাগরে গোসল করতে নেমে পর্যটকদের মৃত্যুর মতো দুঃখজনক ঘটনাও ঘটছে সেখানে।

১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতের মধ্যে কলাতলী, সুগন্ধা, সি-গাল ও লাবণী পয়েন্টের চার কিলোমিটার এলাকায় পর্যটকেরা ভিড় করেন বেশি। এর আশপাশেই বেশির ভাগ হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউস গড়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে দোকানপাট, রেস্তোরাঁ, নানা বিনোদন–সুবিধাও।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোসল করতে নেমে এই এলাকায় প্রায়ই ঘটছে পর্যটকদের মৃত্যুর ঘটনা। সি-সেফ লাইফগার্ড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গত আট বছরে কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্ট থেকে ৩২ জন পর্যটকের লাশ উদ্ধার করেছে। সাগরে নেমে চোরাবালিতে আটকে পড়ে গত ১৮ বছরে অন্তত ১২৪ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর এই সংখ্যাটা অগ্রাহ্য করার মতো নয়।

সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতা চালান জেলা প্রশাসনের ২০–২৫ জন বিচকর্মী ও সি-সেফের ২৬ জন লাইফগার্ড। তবে সাগরের তলদেশে কেউ আটকা পড়লে উদ্ধারের জন্য ডুবুরির প্রয়োজন হয়। কিন্তু কক্সবাজারে একজন ডুবুরিও নেই, এটা খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার। তার চেয়ে বড় কথা, ওই চার কিলোমিটার এলাকার বাইরে কোনো পর্যটক গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হলে সেখানে উদ্ধারের কেউ নেই। এ ছাড়া লাবণী পয়েন্টে সৈকতে ব্যাপক ভাঙনের কারণে পর্যটকদের গোসল করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে বলে দাবি করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, বিচকর্মী ও লাইফগার্ড দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে হবে। তাঁদের সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ আছে, ডুবুরি নিয়োগের চিন্তা প্রশাসনের নেই। তাঁর এ বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে সমুদ্রসৈকতগুলোতে পর্যটকদের গোসলের জন্য আলাদা ‘সুইমিং জোন’ থাকে। সৈকতে গোসলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের নিরাপদ সুবিধা দাবি করে আসছে কক্সবাজার নাগরিক সমাজ। তাদের ভাষ্য, এ দাবি কানেই তুলছে না প্রশাসন। কারণ, সবাই সৈকত দখল ও আশপাশের জমি কিনে হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ বানাতেই ব্যস্ত।

শুধু হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ গড়ে তুললেই কি একটি জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হয়ে যায়? বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজারকে কি একটি আদর্শ পর্যটনকেন্দ্র বলা যায়?

এটা আমাদের নীতিনির্ধারক ও দায়িত্বশীলেরা কখন বুঝবেন? কক্সবাজারে পর্যটকের মৃত্যু রোধে তঁাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ সার্বক্ষণিক ডুবুরির উপস্থিতি নিশ্চিত করা হোক।