অচল যন্ত্র আমদানি

সরকারি অর্থ অপচয়ের দায় কে নেবে

সরকারি অর্থ যে কতভাবে অপচয় করা যায়, তার একটা জলজ্যান্ত নজির দেখা গেল সিটি করপোরেশনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘অচল যন্ত্র’ ও ‘অকার্যকর যান’ কেনাকাটায়। এসব যন্ত্র ও যান কেনার ক্ষেত্রে যতটা নিয়ম লঙ্ঘন করা যায়, তার সবটাই ঘটেছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে সরকার প্রতিবছর জাতীয় বাজেট থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে কিছু বরাদ্দ দেয়। এসব টাকা দিয়ে মন্ত্রণালয় ইচ্ছেমতো যান-যন্ত্র কেনে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রাম সিটিতে পরীক্ষা করে অকার্যকর প্রমাণিত হওয়ার পরও ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি উইড হারভেস্টার যন্ত্র কেনা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, জার্মানিতে তৈরি এই যন্ত্র আধুনিক পদ্ধতিতে সব ধরনের ভাসমান বর্জ্য ও কচুরিপানা পরিষ্কার করে তা ডাম্পিং করতে সক্ষম। জল ও স্থল দুই স্থানেই চলতে পারে যন্ত্রটি।

প্রথমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, দ্বিতীয়বার মন্ত্রী ও মেয়রের উপস্থিতিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং পরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে পরীক্ষা চালানো হয়। তিন দফা পরীক্ষায় ফেল করার পরও সেগুলো আমদানি করে সিটি করপোরেশনের ঘাড়ে গছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বর্জ্য অপসারণে অকার্যকর যন্ত্রটিকে তিন সিটির কোনোটাই নিতে চাইছে না।

দেখা যাচ্ছে, উইড হারভেস্টার কেনার প্রতিটি ধাপেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে প্রতিনিধি পাঠিয়ে পরীক্ষার নিয়ম থাকলেও সেটা করা হয়নি। বিনা প্রতিযোগিতায় সরাসরি ক্রয়প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেনা হয়েছে। এসব যন্ত্রের দাম নিয়ে দেশে কারও ধারণা ছিল না।

তাই ইচ্ছেমতো দাম দিয়ে এই যন্ত্র কেনা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কালো তালিকাভুক্ত একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এগুলো কেনা হয়েছে। এমনকি জার্মানি থেকে আমদানি করার কোনো সনদ দেখাতেও ব্যর্থ হয়েছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের অচল ও অপ্রয়োজনীয় যন্ত্র আমদানির অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে রাস্তাঘাটের ধুলা পরিষ্কার করতে ২০টি রোড সুইপার ট্রাক কেনা হয়েছিল। ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা এসব সুইপারে ধুলা পরিষ্কারের বদলে বরং বেশি করে ধুলা ওড়ে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর যুক্তি হলো, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি দেখে আসছেন, তাঁর মন্ত্রণালয়ে এভাবেই কেনাকাটা চলছে। যন্ত্রগুলো সরেজমিন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

সেগুলো কাজ না করলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিদ্যমান আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এসব অচল যান-যন্ত্র কেন নিয়ে আসা হলো? জনগণের এই অর্থ অপচয়ের দায় কে নেবে?