পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সেতুর সঙ্গে সংযোগ সড়ক এক্সপ্রেসওয়েটিও দেশের যোগাযোগব্যবস্থার অন্যতম নিদর্শন। ফলে সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের বড় দায়িত্ব।
এখানে চালক, যাত্রী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাও যুক্ত। কিন্তু সেই নিরাপত্তা তখন হুমকির মুখে পড়ে, যখন ওই এলাকায় অনুমোদনহীনভাবে অস্থায়ী পেট্রলপাম্প গড়ে তোলা হয়।
দুঃখজনক হচ্ছে, এমন ঘটনাই ঘটেছে এক্সপ্রেসওয়ে–সংলগ্ন নাওডোবা এলাকায়। ঝুঁকিপূর্ণভাবে জ্বালানি তেল বিক্রি করায় সেখানে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পদ্মা সেতুর আশপাশে ও এক্সপ্রেসওয়েতে এখনো কোনো পেট্রলপাম্পের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কিন্তু দুই মাস আগে সেখানে ২০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে টিনের চালাঘরে দুটি জ্বালানি তেল বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সেখানে পেট্রলপাম্পের যন্ত্রপাতিও বসানো হয়েছে। প্লাস্টিকের পানির ট্যাংকে পেট্রল, অকটেন ও ডিজেল মজুত রাখা হয়েছে।
সেসব আবার প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে তেল সরবরাহের যন্ত্রে আনা হচ্ছে। এরপর আরেকটি পাইপের মাধ্যমে সেই তেল যানবাহনে সরবরাহ করা হচ্ছে। এভাবে প্লাস্টিকের ট্যাংকে তেল মজুত ও প্লাস্টিকের পাইপের সঙ্গে সরবরাহ করা কোনোভাবেই সুযোগ নেই। কিন্তু সেটিই ঘটছে তেলের অবৈধ এ পাম্পগুলোতে।
এ বিক্রয়কেন্দ্র দুটি থেকে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার দূরত্ব এক কিলোমিটার। আর আশপাশে রয়েছে শেখ রাসেল সেনানিবাস, সার্ভিস এরিয়া-২, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এভাবে পেট্রলপাম্প পরিচালনা করায় ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন যাত্রী, পরিবহনচালক, মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা সবাই। একটি বিক্রয়কেন্দ্রের মালিক বলছেন, ‘পেট্রলপাম্প স্থাপনের অনুমতি এখনো পাইনি।
তবে এখানে তেল বিক্রি করার মৌখিক অনুমতি স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে।’ আমরা জানি না, কী করে মৌখিকভাবে এমন অস্থায়ী পেট্রলপাম্পের অনুমতি দেয় প্রশাসন। ওই মালিকের দাবি যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, অবৈধভাবে পেট্রলপাম্প পরিচালনায় সুযোগ করে দিয়েছে খোদ প্রশাসনই।
তবে প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল বৃহস্পতিবার একজন ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে অস্থায়ী পেট্রলপাম্প দুটি বন্ধ করে দেন এবং মালিকপক্ষকে জরিমানা করেন। এর জন্য আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে এত দিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সেগুলো কীভাবে চলল, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
আমরা আশা করব, পরবর্তী সময়ে এ ধরনের কোনো অবৈধ পেট্রলপাম্প যেন সেখানে গড়ে না ওঠে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা অনুসারে যথাযথ নিয়ম মেনে সেখানে বৈধভাবে পেট্রলপাম্প বসানো যায় কি না, সেটি বিবেচনা করা হোক।