সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

মৃত্যুশয্যায় সরোজ দেব

উন্নত চিকিৎসার জন্য সবাই এগিয়ে আসুন

লিটলম্যাগ বা ছোটকাগজের চর্চার মধ্য দিয়ে একসময় গতিশীল ছিল তারুণ্যের সাহিত্যচর্চা। প্রথাগত সাহিত্যচর্চার বাইরে তারুণ্যের সাহস ও স্পর্ধার জায়গা ছিল লিটলম্যাগ। মফস্‌সল বা জেলা-উপজেলা শহরগুলো থেকে প্রকাশিত হতো অসংখ্য ছোটকাগজ। একনিষ্ঠ সাহিত্যকর্মীরা সেসব ছোটকাগজের মাধ্যমে নিজেদের সাহিত্যচর্চা ছড়িয়ে দিতেন দেশজুড়ে, যার নাম হয়ে ওঠে লিটলম্যাগ আন্দোলন। সময়ের পরিক্রমায় সেই লিটলম্যাগ চর্চায় ভাটা পড়েছে, আগের সেই আন্দোলনও নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ তথ্যপ্রযুক্তির নানা অনুষঙ্গের প্রভাবে বদলে গেছে বাস্তবতা, বদলে গেছে সাহিত্যচর্চার গতিপ্রকৃতি। 

লিটলম্যাগ আন্দোলনের বড় একটি ক্ষেত্র ছিল উত্তরাঞ্চল বা রাজশাহী–রংপুর অঞ্চল। ষাট দশকে উত্তরাঞ্চলের লিটলম্যাগ আন্দোলনকে যেসব সাহিত্যকর্মী এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম কবি সরোজ দেব। সে সময় থেকে তাঁর পদচারণে মুখর ছিল গাইবান্ধার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন। কলেজজীবন থেকেই ছোটকাগজ শব্দ–এর সম্পাদক হিসেবে নাম অর্জন করেন তিনি। টানা ৫৬ বছর প্রকাশিত হয়েছে শব্দ। এ ছাড়া নানা সময়ে আরও দেড় শতাধিক সাহিত্যপত্রিকা ও লিটলম্যাগ সম্পাদনা করেছেন সরোজ দেব।

ভরা তারুণ্যে আপসহীনভাবে সাহিত্যচর্চা করে যাওয়া সরোজ দেবের জীবন এখন পড়ন্তবেলায়। ৭৩ বছর বয়সী এই কবির এখন দিন কাটছে দুঃখ–কষ্ট আর অনাহারে। বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন হাসপাতালের বিছানায়। জীবন বড় প্রিয় উচ্চারণ/ কেননা জীবন বড় প্রিয় আলিঙ্গন—‘মৃত্যুর কাছে’ কবিতায় এভাবেই জীবন নিয়ে উচ্চারণ ছিল সরোজ দেবের। কিন্তু দিন শেষে কোন জীবনকে আলিঙ্গন করতে হলো তাঁকে?  

ডেইলি স্টার বাংলা এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, কবি সরোজ দেব বর্তমানে গাইবান্ধা শহরের ঐশী ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ক্যানসার–বিশেষজ্ঞ জাহান আফরোজা লাকীর তত্ত্বাবধানে আছেন তিনি। প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে অনাহারে, দুঃখ–কষ্টে দিন কাটছে সরোজ দেবের। শুভাকাঙ্ক্ষী ও কাছের মানুষের অর্থ সহযোগিতায় বর্তমানে কবির চিকিৎসা চলছে।  

বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের নানা আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন সরোজ দেব। মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেও গড়েছেন একাধিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। মফস্‌সলে থেকে সাহিত্যচর্চা করেই গোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। 

সরোজ দেবের শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলছেন, তাঁর আরও উন্নত চিকিৎসা দরকার। সাহিত্যকর্মী ছাড়াও সরোজ দেব একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর পাশে দাঁড়ানো রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি এবং সামর্থ্যবানেরা এগিয়ে আসবেন।