অব্যাহত লোডশেডিং 

গ্রামাঞ্চলের মানুষের কি বিদ্যুৎ লাগে না

তাপমাত্রা কমবে না বলে আবহাওয়া দপ্তর তথ্য দিয়েছে। শেষ চৈত্রে বাংলাদেশে গরম পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই গরমের সঙ্গে যদি বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের মাত্রাও বেড়ে যায়, মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। তা-ও রোজার দিনে। 

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, এপ্রিলের শুরুতে দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের কোথাও কোথাও দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। গরমে চাহিদা বাড়লেও জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। 

দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। গত বুধবার দিনের বেলায় সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। ওই সময় সরবরাহ ঘাটতি ছিল ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি, যা লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা হয়েছে। এর পুরোটাই করা হয়েছে মূলত ঢাকার বাইরে, দেশের বিভিন্ন গ্রাম এলাকায়। আগের দিন দিবাগত মধ্যরাতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল।

বিদ্যুৎ বিভাগ ঢাকায় লোডশেডিং নেই দাবি করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। অনেক এলাকায় দিনে কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যায়। অন্যদিকে ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চলের অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। কোথাও দিনে সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে জনজীবন যেমন বিপর্যস্ত, তেমনি কৃষি ও শিল্পের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর অঞ্চলে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কথা বলা হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের একজন কৃষক বলেন, যদি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া না যায়, তাহলে ভরসা করতে হবে ডিজেলের ওপর। সে ক্ষেত্রে খরচ বাড়বে কয়েক গুণ।

গ্রীষ্ম মৌসুমে গত দুই বছরে দিনে গড়ে তিন ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করা হয়েছে। কোথাও কোথাও ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন না হলেও বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতার কারণে খরচ বেড়েছে বিদ্যুৎ খাতে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও কেন্দ্র ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) দিতে হচ্ছে। এতে প্রতিবছর বাড়ছে ভর্তুকি। গত দেড় দশকে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১৪ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনছে পিডিবি।  

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার তাদের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। একই সময় তারা সরবরাহ পেয়েছে ৬ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে আরইবির এলাকায়। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে দেখা যায়, সারা দেশে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করা হলে ৯৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। এ হিসাবে ২ হাজার মেগাওয়াট ঘাটতির জন্য দুই ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করতে হয়। 

দফায় দফায় বাড়িয়েও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না হওয়ার পেছনে আছে অপচয়-দুর্নীতি, আছে সরকারের ভুল নীতিও। বিদ্যুৎ বিভাগ ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখলে গ্রামাঞ্চলের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে। গ্রীষ্মের শুরুতেই যদি প্রতিদিন তিন ঘণ্টা থেকে সাত ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়, মে-জুন মাসে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হবে।

 সরকার শহরে লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় রেখেছে সম্ভবত বিক্ষোভের ভয়ে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনে রাখা উচিত, গ্রামের মানুষও ক্ষুব্ধ হতে জানে। অতীতে তারা বিদ্যুৎ–সারের দাবিতে আন্দোলন করে জীবন দিয়েছে। সে রকম পরিস্থিতি হোক, সেটা কারও কাম্য নয়। সরকারকে প্রয়োজনীয় জ্বালানির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমে।