সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

নওগাঁর ত্রুটিপূর্ণ পয়ঃশোধনাগার

দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনুন

বিগত সরকারের আমলে সরকারি প্রকল্প মানেই কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর অর্থ লুটপাটের জায়গা হয়ে উঠেছিল। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে বাজেট বাড়ানো থেকে শুরু করে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ কাজ—এ সবকিছুই হয়ে উঠেছিল স্বাভাবিক চিত্র। ফলে জনগণের করের টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হতো ঠিকই, কিন্তু তার সুফল তাঁরা পেতেন না। বলা চলে, উন্নয়ন প্রকল্পে একটা অবাধ স্বেচ্ছাচারিতা, মিলেমিশে লুণ্ঠন ও জনগণের প্রতি দায়হীনতার একটা অপসংস্কৃতি জেঁকে বসেছিল। নওগাঁ পৌরসভার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য শোধনাগার প্রকল্পটি তারই একটা দৃষ্টান্ত।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ২০২২ সালের এপ্রিলে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু আড়াই বছর পরও কারিগরি ত্রুটির কারণে সেটা চালু করা যায়নি। সেটার যন্ত্র ও সরঞ্জাম নষ্ট হতে বসেছে। পয়ঃশোধনাগারটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। সেটা চালু না হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানেই ময়লা ও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব প্রকল্পটির আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল, শহরের বাসাবাড়ির বর্জ্য ব্যবহার করে জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব হবে। ফলে যে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশদূষণের কথা ভেবে পয়ঃশোধনাগারটি করা হয়েছে, তার উদ্দেশ্যই মাঠে মারা যাচ্ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এর দায় কার? পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পের ডিজাইনে ত্রুটির কারণে প্রকল্পটি দুই বছরেও চালু করা যায়নি। প্রকল্পটির নকশায় পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার কোনো পদ্ধতি বা যান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়নি। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটি চালু না করায় ইতিমধ্যে স্থাপন করা সরঞ্জাম নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পৌরসভার দায়িত্বশীল একজন প্রকৌশলীর কাছ থেকে জানা যাচ্ছে, পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করতে গেলে নতুন অবকাঠামো দরকার। সেটা করার জন্য ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেই টেন্ডার আহ্বান করে ঠিকাদার বাছাই করে কাজ শুরু করা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন একটা প্রকল্পের কেন অনুমোদন দেওয়া হলো, যেখানে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করা যাবে না?

এই ত্রুটিপূর্ণ প্রকল্পটি অনুমোদনের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের সবাইকে জবাবদিহি ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। এভাবে জনগণের অর্থ নষ্ট করার অধিকার তাঁরা কীভাবে পান।