সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

বিএসএমএমইউ

বিশ্ববিদ্যালয় কি আত্মীয় পুনর্বাসনকেন্দ্র

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেই তাঁদের আত্মীয়স্বজনের প্রতিভা ও মেধা বিকশিত হতে থাকে এবং অনায়াসে চাকরি পেয়ে যান। এর আগে উপাচার্যদের স্বজনপ্রীতি, কন্যা ও জামাতাপ্রীতির বহু খবর ছাপা হয়েছে।

একজন উপাচার্য তো তাঁর স্বজনকে চাকরি দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি পর্যন্ত বদলে ফেলেছিলেন। ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে একাধিক উপাচার্য রাতের অন্ধকারে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে কোনো কোনো উপাচার্যকে।

২৩ মে প্রথম আলোয় ‘বিএসএমএমইউ: উপাচার্যের আত্মীয় হলেই চাকরি’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদের সময়ে নিয়মরীতি ভঙ্গ করে আত্মীয়স্বজনকে চাকরি দেওয়া, টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া, বিমানভাড়ায় অনিয়ম, দোকান ও ক্যানটিন ভাড়ার টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল জমা না দেওয়ার অভিযোগ এসেছে।

প্রথম আলোর খবর থেকে আরও জানা যায়, উপাচার্যের ছোট ছেলে তানভীর আহমেদ ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত স্নাতকোত্তর (এমডি–এমএস) কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা যায়, ওই পরীক্ষার সার্বিক তত্ত্বাবধান কমিটির প্রধান ছিলেন উপাচার্য নিজে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম হলো পদাধিকারীদের কারও আত্মীয়স্বজন চাকরির জন্য দরখাস্ত করলে তিনি নিয়োগপ্রক্রিয়ায় থাকতে পারবেন না।

তানভীর বিএসএমএমইউর স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী। একই সঙ্গে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি অটোল্যারিংগোলজি (নাক কান গলার সার্জারি) বিভাগে পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) পদে রয়েছেন। এই চাকরি হয়েছে তাঁর বাবার আমলে। তানভীরের বাবা অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যের দায়িত্ব পান ২০২১ সালের মার্চে। উপাচার্যের ছেলে তানভীরের স্ত্রী ফারহানা খানম চিকিৎসক। গত ১ জানুয়ারি ফারহানার চাকরি হয়েছে বিএসএমএমইউর শিশু বিভাগে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপাচার্যের এ রকম অন্তত ১১ জন আত্মীয় চাকরি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁদের মধ্যে ৭ জন নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর। বাকি চারজনের দুজন নিয়োগ পান শারফুদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়টির সহ-উপাচার্য থাকার সময়। আর দুজন যখন নিয়োগ পান, তখন তিনি আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বিএসএমএমইউ শাখার সভাপতি ছিলেন।

গত ২৯ জানুয়ারি এক যুবক বিএসএমএমইউতে টাকা নিয়ে নিয়োগ হয় বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি চাকরি দেওয়া না-দেওয়াকে কেন্দ্র করে উপাচার্যের কার্যালয়ে শারীরিক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। উপাচার্যের অনিয়ম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) একটি অভিযোগ জমা পড়েছে।

উপাচার্য অবশ্য স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সবকিছু নিয়মের মধ্যেই হয়েছে। চাকরিপ্রাপ্ত লোকের সংখ্যা জানানো হলে তিনি বলেন, এত আত্মীয়স্বজনের চাকরি হওয়ার কথা নয়। তাহলে কি আত্মীয়ের নামে অন্য কেউ চাকরি নিয়েছেন? চাকরি পাওয়া একজন বলেছেন, উপাচার্য তেমন আত্মীয় নন।

দেশের শীর্ষ চিকিৎসা শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএসএমএমইউর সুনাম আছে। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের কথা আমরা বেশ কিছুদিন ধরে শুনে আসছি। শুনে কষ্ট পেয়েছি, বিব্রত হয়েছি।’

 বিএসএমএমইউর উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের খামখেয়ালিতে দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।