বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে সবার একটাই কথা, নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে গড়তে হবে স্বনির্ভর অর্থনীতি, কমাতে হবে পরনির্ভরশীলতা। দেশের উৎপাদন খাতে স্বনির্ভরতা তৈরির বিষয়টি অনেক আগেই করা সম্ভব ছিল। এর জন্য পাকিস্তান আমল থেকেই এখানে শক্তিশালী অবকাঠামো তৈরি ছিল। স্বাধীনতার পর নানা সরকারের আমলে সেই পরিসর আরও বৃদ্ধি পায়। সেই কাঠামো বা প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। এর অধীনে গোটা দেশে সত্তরটির বেশি শিল্পনগরী গড়ে উঠেছে। একেকটি শিল্পনগরীতে আছে শতাধিক পর্যন্ত শিল্পকারখানা। যদিও এর কোনো কোনোটির এমন রুগ্ণ দশা, শিল্পনগরীর উদ্দেশ্যটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি, মানিকগঞ্জ ও ঝালকাঠিতে বিসিক শিল্পনগরীর ক্ষেত্রে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৮৭ সালে গড়ে ওঠা মানিকগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীতে শিল্পকারখানার জন্য ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ৩৫ বছরেও শিল্পনগরীটি পরিপূর্ণতা পায়নি। বর্তমানে ২৪টি শিল্পকারখানার মধ্যে চালু আছে ১৩টি। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, বিসিক শিল্পনগরীর অবকাঠামোগত তেমন উন্নয়ন হয়নি। গ্যাস ও আর্থিক সংকটের পাশাপাশি কাঁচামালের স্বল্পতাসহ নানা সমস্যায় কারখানাগুলোতে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। লোকসানের মুখে অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আবার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আছে অভিযোগ। তাঁদের অনেকে বিসিকে প্লট বরাদ্দ পেয়ে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে হাওয়া হয়ে গেছেন।
অন্যদিকে ঝালকাঠিতে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসায়ীরা কারখানা চালু করতে ব্যাংক থেকে ঋণ চেয়ে পাচ্ছেন না। ৭৯টি প্লট নিয়ে ২০১৯ সালে এ শিল্পনগরী গড়ে ওঠে। সে বছরই প্লট বরাদ্দ শুরু হয়। প্লট বরাদ্দের শর্ত অনুযায়ী, ৩১ মাসের মধ্যে উৎপাদনে যেতে হবে। নয়তো বরাদ্দ প্লট বাতিল করা হবে। তবে অধিকাংশ শিল্পোদ্যোক্তা এসব প্লটের বিপরীতে ব্যাংকঋণ না পাওয়ায় কারখানা করতে পারছেন না। এখানে এখন পর্যন্ত ৫০টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কারখানা চালু হয়েছে মাত্র দুটি। বাকিরা ঋণসুবিধা না পাওয়ায় এ শিল্পনগরীও অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে।
তাহলে এ শিল্পনগরী দুটির কী হবে? কোনো অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা তৈরি না করে বা ব্যাংকঋণ–সুবিধা নিশ্চিত না করলে কেন এ শিল্পনগরীগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হবেন ব্যবসায়ীরা। একইভাবে এটিও নিশ্চিত করতে হবে যে ঋণ নিয়ে যাতে কোনো ব্যবসায়ী লাপাত্তা হওয়ার সুযোগ না পান। বিসিক শিল্পনগরী দুটির এমন রুগ্ণ দশা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এর ফলে সরকারের অর্থ, জনবল ও জমির অপচয়ই হচ্ছে না, দেশের উৎপাদনমুখী অর্থনীতিতেও কোনো অবদান রাখতে পারছে না শিল্পনগরী দুটি। আমাদের জানতে চাওয়া, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কি কোনো মাথাব্যথা আছে?