সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

অর্থ পাচার পুরোপুরি বন্ধ হোক

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে, এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। বছরের শুরু থেকে ডলার–সংকট বাড়লে আওয়ামী লীগ সরকার প্রবাসীদের প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার প্রকৃত কারণ হুন্ডি ব্যবসা বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সেই প্রণোদনা খুব একটা কাজে লাগেনি।

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা প্রায় ২৮ হাজার ৭৪০ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে)। গত বছরের অক্টোবরে দেশে এসেছিল ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব নিয়েই তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ডলার-সংকট কাটাতে আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে বিদ্যমান বন্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা। এতে বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় ডলারের মধ্যবর্তী দাম ১১৭ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারছে ব্যাংকগুলো। প্রণোদনা দিয়ে ব্যাংকগুলো এখন ১২২ টাকায়ও প্রবাসী আয় কিনছে।

বিভিন্ন ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, দাম অতিরিক্ত বাড়িয়ে প্রবাসী আয় কেনার যে প্রতিযোগিতা ছিল, এখন তা অনেকটাই কমে এসেছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ি কমায় সব ব্যাংকের জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসীদের আয় বৈধ পথে এলেও বাকিটা অবৈধ পথে বা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসত। হুন্ডির মাধ্যমে আসা অর্থের বৈদেশিক মুদ্রা সেখানেই থেকে যেত। এখানে তাদের ব্যবসায়িক অংশীদার দেশীয় মুদ্রায় সেটি শোধ করতেন। ফলে সরকার প্রবাসী আয়ের বিপরীতে বিরাট বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হতো।

ডলার–সংকটের আরেকটি কারণ বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাপক ঘাটতি। অর্থাৎ আমরা যে পরিমাণ অর্থের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করি, বিদেশ থেকে আমদানি করি অনেক বেশি। পণ্য রপ্তানি করে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার একটি অংশ চলে যায় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি করতে। অথচ প্রবাসীদের পাঠানো সব টাকাই যাতে বৈধ চ্যানেলে আসে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার পর অর্থ পাচার অনেকটাই কমে গেছে। ফলে প্রবাসীদের মধ্যে বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর পরিমাণও বেড়েছে। এই ধারা ধরে রাখতে হলে অর্থ পাচার যেমন পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে, তেমনি প্রবাসীরা যাতে বৈধ পথে বেশি করে অর্থ পাঠান, সে বিষয়েও তাঁদের উৎসাহিত করতে হবে। গত আড়াই মাসে পরিস্থিতির যে উন্নতি হয়েছে, সেটা ধরে রাখতে হবে।

এ ক্ষেত্রে বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোও ভূমিকা রাখতে পারে। প্রবাসীদের অভাব-অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারলে তাঁরা আরও উৎসাহিত হবেন।