গ্রামগঞ্জে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরি একটা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও এর প্রবণতা এত বেশি, যা উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়ায়। যেমন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় ট্রান্সফরমার চুরি করতে গিয়ে চলতি বছর গণপিটুনিতে একজন নিহতও হয়েছেন। এরপরও উপজেলাটিতে ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা থামছে না। কেন চোর চক্রকে ধরা যাচ্ছে না, তাদের থামানো যাচ্ছে না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলাটিতে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুতের ১২৭টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। গণপিটুনিতে একজনের মৃত্যুর পর চুরির ঘটনা কিছুটা বন্ধ হয়েছিল। এখন সেটি আবার বেড়েছে। রাওনা ইউনিয়নের দীঘা গ্রাম থেকে ১৩ ডিসেম্বর রাতে ছয়টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এসব ট্রান্সফরমার দিয়ে জমিতে দেওয়া হতো। এক সপ্তাহ পর বোরো মৌসুমের জন্য সেচ শুরু হতো। এখন সেই সেচ কার্যক্রমের জন্য নতুন ট্রান্সফরমার কিনতে হবে ভুক্তভোগীদের। এ জন্য কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে যাবে।
পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, চুরি হওয়ার পর ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন করতে সাধারণ গ্রাহককে প্রথমবার অর্ধেক মূল্য ও দ্বিতীয়বার চুরি হলে পুরো মূল্য দিতে হয়। আর সেচের বেলায় চুরি হওয়ার পর পুরো মূল্য দিয়ে নতুন ট্রান্সফরমার কিনে স্থাপন করতে হয়। চুরি হওয়ার পর ট্রান্সফরমার কেনার টাকা জোগাড় হতে দেরি হওয়ায় ট্রান্সফরমার পুনঃস্থাপনেও বিলম্ব হয়। এতে গ্রাহক ও কৃষক—উভয়েই দুর্ভোগে পড়েন।
পিডিবির গফরগাঁও বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এসব ঘটনায় নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ ডায়েরি করা হয় কিন্তু চোর ধরা পড়ছে না। এটা সবার জন্য ভোগান্তি।’ এ বিষয়ে গফরগাঁও থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘চুরি রোধে আমাদের টহল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আশপাশের চোরদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। চুরি রোধে পুরো এলাকায় পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
একটি উপজেলায় ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটতেই থাকবে আর সেটি কোনোভাবেই রোধ করা যাবে না, তা সন্দেহের উদ্রেক করে। এখানে পিডিবি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাফিলতি স্পষ্ট। চোর চক্র কি এতটাই শক্তিশালী যে তাদের ধরা যাচ্ছে না? এটি স্পষ্টই ব্যর্থতা। পিডিবি ও পুলিশকে এর দায় নিতে হবে। এখন দেখার অপেক্ষা, তারা কী করে।