সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

রংপুরে সড়কে ধস

পরিকল্পনাগত ত্রুটি কাম্য নয়

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন ঘটেছে। বিশেষ করে অনেক আঞ্চলিক মহাসড়ক ও সেতুর কারণে জেলা ও বিভাগীয় এবং প্রধান শহরগুলোর যোগাযোগ খুব সহজ হয়ে গেছে। আবার সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও অবহেলার বিষয়টিও সামনে আসে অনেক সময়। ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি ও পরিকল্পনাগত ঘাটতির কথাও বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। রংপুরে একটি আঞ্চলিক মহাসড়কের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেছে। ২৮ কোটি টাকায় সংস্কারের তিন মাসেই সড়কের নানা জায়গায় ধস দেখা গেছে। ফলে সড়কটি বেশি দিন না টেকার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রংপুর নগরের বুড়িরহাট থেকে গঙ্গাচড়া উপজেলার শংকরদহের সিরাজুল বাজার পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটি খুব বেহাল হয়ে পড়ে ছিল। কয়েক বছর ধরে জনদাবির মুখে সড়কটি সংস্কার করা হয়। সড়কের প্রায় ১১ কিলোমিটার অংশের মেরামত ও বর্ধিতকরণের কাজ শেষ হয়েছে তিন মাস আগে। কিন্তু এরই মধ্যে ওই অংশের অন্তত ৪০টি স্থানে সড়কের বর্ধিত অংশ ধসে গেছে। বৃষ্টি হলেই মাটি দেবে যাচ্ছে এবং খুলে পড়ছে ইট। সড়কটি নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।

সড়কটির এক কিলোমিটার সংস্কারে খরচ পড়েছে দুই কোটি টাকার বেশি। কিন্তু তিন মাসেই কেন সেটি এমন বেহাল হলো। এলজিইডির রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্য, পাথরবাহী ভারী যানবাহনের চলাচল করায় সড়কের বর্ধিত অংশ চাপ নিতে পারছে না। তাঁর দাবি, এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।

এ সড়ক হয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর ওপর শেখ হাসিনা সেতুর ওপর দিয়ে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে যাওয়ার পথ। ওই সড়কে পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করে। বিশেষ করে ১৪ ও ১৬ চাকার একেকটি ট্রাকে কমপক্ষে ৩৫ টন পাথর থাকে। সড়কটি এত বেশি ওজনের গাড়ির ভার নিতে পারছে না বলে রংপুরের ব্যবসায়ী নেতারাও উল্লেখ করছেন। পাথরবাহী ট্রাক আগে লালমনিরহাট দিয়ে দূরবর্তী অন্য সড়ক হয়ে চলাচল করত। এখন এ সড়ক হওয়ায় ট্রাকগুলোর চলাচল সহজ হয়ে গেছে। সড়কটি সংস্কারের সময় ট্রাক চলাচলের বিষয়টি মাথাতেই রাখা হয়নি। বিষয়টিকে স্থানীয় সচেতন মহল পরিকল্পনার অভাব ছিল বলে মনে করছে। তা ছাড়া সড়কটির দুই পাশের বর্ধিত অংশ চাপ সহনীয় হয়ে ওঠার আগেই যেভাবে ট্রাক চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তারও সমালোচনা করেন তাঁরা।

এখন সড়কটি টিকিয়ে রাখতে পাথরবাহী ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্যথায় সেই বিবেচনায় সড়কটি পুনরায় সংস্কার করতে হবে। সড়কের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বিপুল টাকা অপচয়ই হবে শুধু। স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগও ঘুচবে না। এখন এলজিইডি কর্তৃপক্ষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কী করবে।