সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

শামসুর রাহমান স্মৃতি গ্রন্থাগার

১৪ বছর ধরে কেন এটি তালাবদ্ধ

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে তাঁর পৈতৃক গ্রাম নরসিংদীর রায়পুরার পাড়াতলীতে নির্মাণ করা হয় একটি গ্রন্থাগার। ২০০৯ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওই গ্রন্থাগারের জন্য স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ে জেলা পরিষদ একটি একতলাবিশিষ্ট ভবন করে দেয়।

কিন্তু ১৪ বছর ধরে সেটি পড়ে আছে। ভেতরে কয়েকটি চেয়ার–টেবিল ছাড়া কিছু নেই। ভবনের সম্মুখ–গায়ে লেখা থাকা ‘কবি শামসুর রাহমান স্মৃতি গ্রন্থাগার’ নামটিও অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ফলে অনেকে জানেনই না এখানে একটি গ্রন্থাগার আছে। নরসিংদী সুধীমহলও সেই গ্রন্থাগারের কথা অনেকটা ভুলে গেছে। একটি গ্রন্থাগারের এমন দুর্দশা খুবই দুঃখজনক।

নির্মাণের পর গ্রন্থাগারটি কোন কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকবে, কারা পরিচালনা করবে, তা নির্ধারণ করা হয়নি। সেখানে যে জনবল লাগবে, তা–ও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসন পরস্পরের ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। কেউই এ গ্রন্থাগারের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। তবে প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে গ্রন্থাগারটি কীভাবে চালানো সম্ভব, সেই প্রশ্নও আছে।

শুরুতে আসবাবসজ্জিত গ্রন্থাগারটিতে বেশ কিছু বই ছিল। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা সেখানে বইপত্র পড়তে আসতেন। কিন্তু এ চিত্র কিছুদিনের মধ্যে বদলে যায়। এরপর থেকে গ্রন্থাগারটি তালাবদ্ধ। কেন সেটি বন্ধ হয়ে গেল, তা–ও কেউ বলতে পারছে না। তবে মাঝেমধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা সেটি ব্যবহার করেন।

কবি শামসুর রাহমান রাজধানী ঢাকায় জন্মগ্রহণ করলেও পিতৃপুরুষের ভূমি রায়পুরার পাড়াতলীর প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ টান। মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই গ্রামেও ছিলেন কিছুদিন। সে সময় তিনি লিখেছিলেন অমর দুটি কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’।

তাঁর কিশোর পুত্রও মারা যায় গ্রামের বাড়ির পুকুরে ডুবে। ফলে গ্রামটিতে কবির স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখার যথেষ্ট সুযোগ আছে এই গ্রন্থাগারের মাধ্যমে। সেই গ্রন্থাগারকে এখন যে কেউ দেখলে মনে করবে একটি গুদামঘর। কবি শামসুর রাহমানের নামে কি এটি তামাশা নয়?

একটা সময় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত গ্রন্থাগারের চর্চা ছিল, গড়ে উঠেছিল গ্রন্থাগার আন্দোলন। নানা বাস্তবতায় সেই চর্চা ও আন্দোলনে ভাটা পড়েছে। এখনো অনেক জায়গায় কিছু ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে। সেখানে এমন একটি সুন্দর ভবনে নির্মিত একটি গ্রন্থাগার এভাবে পড়ে থাকবে, তার কোনো মানে হতে পারে না।

এই গ্রন্থাগারকে ঘিরে স্থানীয় সমাজে জ্ঞানচর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনারও সম্ভাবনা আছে। এর জন্য গ্রন্থাগারটির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। সেটিকে বইসমৃদ্ধ করে দ্রুত চালু করা হোক। উপজেলা প্রশাসন বা উপজেলা পরিষদকেই এর দায়িত্ব নিতে হবে বলে আমরা মনে করি।