সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

হালদা রক্ষায় অবহেলা কাম্য নয়

চট্টগ্রামের হালদা নদী হচ্ছে দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র। ফলে গুরুত্ব বিবেচনায় এ নদীর রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ হওয়া উচিত সার্বক্ষণিক। স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের কর্তৃপক্ষগুলো এ নদী সুরক্ষায় নানা উদ্যোগ নিলেও দিন শেষে সেগুলো যথাযথভাবে কাজ করছে না। এতে এ নদীর মা মাছ ও ডলফিন রক্ষা নিয়েও কাটছে না দুশ্চিন্তা।

কয়েক বছর আগে হালদা নদীকে সার্বক্ষণিক নজরে রাখতে সেখানে নানা জায়গায় আটটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। এর সুফলও পাওয়া যায়। কিন্তু ক্যামেরাগুলোর চারটিই এখন নষ্ট হয়ে গেছে। এতে এ নদীর মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়টি আবারও ঝুঁকিতে পড়েছে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হালদার গুরুত্বপূর্ণ প্রজনন এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো বসিয়েছিল নৌ পুলিশ। সেগুলো দিয়ে নদীটির ১০ কিলোমিটারজুড়ে নজরদারি করতেন তাঁরা। এর ফলে অবৈধভাবে মাছ শিকার, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল ও বালু তোলা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া আরও সহজ হয়ে যায়। সিসিটিভি ক্যামেরায় মাছ শিকারসহ অবৈধ কোনো কার্যক্রম চোখে পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে স্পিডবোট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর ফলে নদীটিতে ডলফিন ও মা মাছের মৃত্যুর সংখ্যাও একেবারে কমে আসে।

তবে অল্প কয়েক বছরের মধ্যে চারটি ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গেছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বজ্রপাত ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ক্যামেরাগুলো নষ্ট হয়। তবে ক্যামেরাগুলো নষ্ট হওয়া ঝুঁকি শুরু থেকেই ছিল। কারণ, উন্নত মানের ক্যামেরাগুলো বসানোর জন্য ভালো খুঁটি ব্যবহার করা হয়নি। নৌ পুলিশ ছাড়াও একটি বেসরকারি সংস্থা হালদার সুরক্ষায় সমসংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা বসায়। তারবিহীন হওয়ায় সেগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কম, ফলে সেগুলো এখনো সচল আছে।

নৌ পুলিশের স্থানীয় কর্মকর্তার বক্তব্য, ক্যামেরা নষ্ট থাকায় আগের মতো নদীতে নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না এখন। মাত্র কয়েক কিলোমিটার এলাকায় নজরদারি করতে পারছেন তাঁরা। তবে ক্যামেরা নষ্ট হওয়ার বিষয়টি নৌ পুলিশের ঢাকা সদর দপ্তরে জানানো হয়েছে।

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. মনজুরুল কিবরীয়া দুই বছর আগে প্রথম আলোকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য নদীর সঙ্গে তুলনা করলে হালদা রক্ষায় প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে হালদার গুরুত্ব বিবেচনায় জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আশানুরূপ নয়।

হালদার বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন সরকারি প্রশাসন, স্থানীয় জনগণ, এনজিও এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে হালদা কর্তৃপক্ষ গঠন এবং হালদা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নদী রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।

দুঃখজনক হচ্ছে, নদী রক্ষায় লাগানো অল্প কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে এক বছর ধরে। সেখানে সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কী করে সম্ভব?