সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ভয়ভীতি দেখানো বন্ধ হোক

শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করতে বিলম্ব কেন

কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে চলমান সংকট উত্তরণে সরকারের কাছে চার দফা জরুরি দাবি পেশ করেছেন। আমরা মনে করি, তঁাদের এ দাবিনামায় দেশবাসীর মনের কথাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবির মধ্যে আছে ইন্টারনেট সচল করা ও কারফিউ প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরিয়ে নিয়ে সরকার ও প্রশাসনের সমন্বয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে আবাসিক হল খুলে দেওয়া এবং আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এর আগে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের যে দাবি ছিল, সেটা পূরণ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল সরকারি চাকরিতে ৯৫ শতাংশ মেধা ও ৫ শতাংশ কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ। আদালত ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং সেই অনুযায়ী সরকার প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে।

আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, আদালতের রায়ের আগে তিন মন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে দাবিনামা নিয়েছিলেন। কিন্তু রায়ের পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁরা আলোচনার প্রয়োজনই বোধ করলেন না। গত রোববার শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবিদাওয়া মানার বিষয়ে সরকারকে দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সরকারের তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁরা আট দফা দাবি জানিয়েছিলেন।

শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বৈরী দৃষ্টিতে না দেখলে এত প্রাণহানি, এত ধ্বংসযজ্ঞ এড়ানো যেত। সরকারের উচিত অবিলম্বে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা। শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি পেশ করেছেন, তা পূরণ করা কঠিন নয়। ইতিমধ্যে সরকার কারফিউ শিথিল করেছে, সীমিত পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবাও চালু হয়েছে। শিল্পকারখানাও খুলে দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার উদ্যোগ বা তারিখ ঘোষণার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা দেখি না।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের চূড়ান্ত দাবি ক্যাম্পাসগুলোতে গিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে জাতির সামনে পেশ করতে চাই। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমরা এই পরিস্থিতির অবসান চাই। হতাহতের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’ অপর সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা হোক, যাতে শুক্রবার সব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ফিরে যেতে পারেন। আমরা কবে আন্দোলনের শেষ ঘোষণা করব, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে সরকারের ওপর।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে অযৌক্তিক কিছু নেই। কেবল আন্দোলনকারী নয়, যেকোনো শিক্ষার্থী তথা নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। স্বাধীন দেশে নাগরিকেরা কেন ভয়ভীতিতে থাকবেন?

শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে এক নিখোঁজ আন্দোলনকারীর বাবা উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাঁর নিখোঁজ সন্তানের সন্ধান চেয়েছেন। আরেক সমন্বয়ক বলেছেন, তাঁরা প্রতিমুহূর্তে গ্রেপ্তার, তুলে নেওয়া ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের ভয়ে আছেন। এ রকম আরও অনেক নেতা-কর্মী নিখোঁজ কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

কোনো স্বাধীন দেশে এসব ঘটনা ভাবা যায়? আইনশৃঙ্খলা রক্ষা আর জনগণকে ভয়ভীতি দেখানো এক কথা নয়। সরকার দ্রুত দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে চাইলে শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া মেনে নিতে হবে। ভয়ের সংস্কৃতি জিইয়ে রাখলে কিংবা বলপ্রয়োগের পরিণতি কারও জন্যই ভালো হবে না।