দেশে যখন লাখ লাখ বেকার তরুণ চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন অথবা আদম পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে ভাগ্যান্বেষণে বিদেশে গিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন, তখন সাড়ে তিন লাখের বেশি সরকারি পদ শূন্য থাকা কেবল অস্বাভাবিক নয়, অমার্জনীয়ও।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও অফিসে বেসামরিক জনবলের ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির ৪৩ হাজার ৩৩৬টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ৪০ হাজার ৫৬১, তৃতীয় শ্রেণির ১ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৮ এবং চতুর্থ শ্রেণি পদে শূন্য পদ ১ লাখ ২২ হাজার ৬৮০টি।
উল্লেখ্য, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি পদের সংখ্যা ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৫২টি। প্রশাসন যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়, সে জন্য লোকবলকাঠামো তৈরি করা হয়। কিন্তু এত বেশিসংখ্যক পদ (এক–পঞ্চমাংশের বেশি) বছরের পর বছর শূন্য রাখার অর্থ হলো সরকারের দাপ্তরিক কাজগুলো ঠিকমতো হচ্ছে না। অন্যদিকে জনগণকেও সেবা পেতে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
করোনাকালে বাস্তব কারণেই সরকারি-বেসরকারি অফিসে নতুন নিয়োগ বন্ধ ছিল। কিন্তু করোনা চলে যাওয়ার পরও কেন শূন্য পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া ঢিমেতালে এগোচ্ছে? জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, নিয়োগপ্রক্রিয়া চলমান। সেটাই যদি থাকবে, তাহলে ২০২০ সাল থেকে এখন শূন্য পদের সংখ্যা বেড়ে গেল কেন? ওই সময়ে শূন্য পদের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৩৪ হাজার। নীতিনির্ধারকদের মনে রাখা প্রয়োজন যে করোনাকালে নিয়োগ বন্ধ থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়া বন্ধ ছিল না।
এর আগে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের সচিব সভায় শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। শূন্য পদ পূরণে প্রত্যেক সচিবকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কয়েক দফা চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। করোনা মহামারিতে নিয়োগপ্রক্রিয়া থেমে থাকায় চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি করে দ্রুত শূন্য পদ পূরণের নির্দেশনা দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপরও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের শূন্য পদগুলো পূরণ না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। উদ্বেগের বিষয় যে সবচেয়ে বেশি শূন্য পদ আছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।
এই মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থায় শূন্য পদ আছে ৭৪ হাজার ৫৭৪টি। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থায় ৪৪ হাজার ৮২০টি। এভাবে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পদ শূন্য আছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী তৃতীয় শ্রেণির সরকারি পদেই সবচেয়ে বেশি পদ শূন্য আছে। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ হয় বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে। এখানে প্রতি বিসিএস পরীক্ষায় কয়েক লাখ পরীক্ষার্থী থাকলেও নিয়োগ পান মাত্র দুই হাজার কিংবা এর চেয়ে কিছু বেশি। প্রতিবছর যে লাখ লাখ তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়ে আসেন, তাঁরা যাবেন কোথায়? করোনা মহামারি ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেসরকারি খাতেও কর্মসংস্থানের সুযোগও সীমিত।
এ অবস্থায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি চাকরির শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণ করা প্রয়োজন। এতে লাখ লাখ তরুণ যেমন বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবেন, জনগণের সরকারি সেবা পাওয়াও সহজ হবে। নীতিনির্ধারকদের চৈতন্যোদয় হোক।