সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

জোয়ারাধার পদ্ধতি কেন বাদ দেওয়া হলো

যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ আমলে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ দেশে দেখা যায় তার উল্টোটা, বরং ঠিকঠাক সম্ভাব্যতা যাচাই না করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে জনগণের টাকা অপচয় করাটাই নিয়ম হয়ে গেছে। ফলে বড় বড় অনেক প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না, এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। সাতক্ষীরার পাঁচ উপজেলায় জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য একটি প্রকল্পের এমন দশা হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

সড়ক যোগাযোগকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া এবং দখল আর অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীগুলো তাদের চরিত্র হারাচ্ছে। অনেক এলাকায় নদী নাব্যতা হারিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি করছে। এসব জলাবদ্ধতার তুলনায় নগরের জলাবদ্ধতাকে অনেকটা সাময়িক জলজট বলা যায়।

কারণ, নানা অঞ্চলে নদীগুলোর কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিন থেকে যায়। এমন জলাবদ্ধতা নিরসনে চার বছর আগে সাতক্ষীরায় এক প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ২০২০ সালে শুরু হওয়ায় এ প্রকল্প শেষ হবে আগামী বছর। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

তবে নদী ও পানিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, মরিচ্চাপ ও বেতনা নদী খননের ওই প্রকল্পের জোয়ারাধার (টিআরএম-টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) পদ্ধতি না রাখায় সুফল পাওয়া যাবে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর দেখা যেতে পারে জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর না হয়ে মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ট্রাস্টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) পক্ষ থেকে জরিপ করে বেতনা ও মরিচ্চাপের অববাহিকার বিলে জোয়ারাধার পদ্ধতি বাস্তবায়ন করার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছিল। কিন্তু প্রকল্প থেকে জোয়ারাধার পদ্ধতি বাদ দিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

বেতনা ও মরিচ্চাপ—দুটিই জোয়ার-ভাটার নদী হওয়ায় নাব্যতা রক্ষার জন্য এখানে জোয়ারাধার গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি সীমান্ত নদী ইছামতীর সঙ্গে সাপমারা ও লাবণ্যবতী নদীর সংযোগ স্থাপন না করলে এ প্রকল্প সুফল বয়ে আনবে না। কিন্তু আইডব্লিউএমের সুপারিশ সত্ত্বেও কেন জোয়ারাধার পদ্ধতি বাস্তবায়নের প্রস্তাবটি বাতিল করা হলো?

পাউবোর সাতক্ষীরা বিভাগের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীরা এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তাঁরা সাতক্ষীরায় মাত্র কয়েক মাস আগে এসেছেন, এমন চিরায়ত দায়সারা বক্তব্য দিয়েই দায় সারলেন।

তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন, কোন যুক্তিতে বা কার স্বার্থে আইডব্লিউএমের সুপারিশকে গুরুত্ব দেওয়া হলো না? সুফলই যদি না পাওয়া যায়, কেন তাঁরা এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন? এভাবে জনগণের অর্থের অপচয় কেন?