কক্সবাজারের মহেশখালী বিগত সরকারের আমলে হয়ে উঠেছিল বড় প্রকল্পের অঞ্চল। বিপুল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভারে উপজেলাটির পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে গেছেন পরিবেশবিদেরা। আমরা দেখি, তৎকালীন ক্ষমতাসীন নেতা ও প্রভাবশালীরা সেখানকার পরিবেশ ধ্বংসে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। কয়েক হাজার একর প্যারাবন ধ্বংস করে বানিয়েছেন চিংড়িঘের। এ নিয়ে বারবার প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছি আমরা। তাতে কোনো কাজ হয়নি। এমনকি সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরও মহেশখালীর পরিস্থিতি থেকে গেছে আগের মতোই। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
মহেশখালীর প্রতিবেশ–সংকটাপন্ন সোনাদিয়া দ্বীপের তিন সহস্রাধিক একর প্যারাবন কেটে ছোট-বড় অর্ধশত চিংড়িঘের নির্মাণ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এর বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কিছু অভিযান চালানো হলেও তাতে কোনো সুফল মেলেনি। মামলা হলেও আসামিদের ধরার ব্যাপারে তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা যায়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও ঘেরগুলো উচ্ছেদ হয়নি। অবৈধভাবে নির্মিত ঘেরগুলোতে এখন চিংড়ির চাষ চলছে। স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে চিংড়িঘেরগুলোর দ্রুত উচ্ছেদের দাবি করেন। পাশাপাশি বিরান হওয়া জায়গায় গাছ রোপণের দাবিও জানান তাঁরা। তা ছাড়া সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে এলাকা বিলীনের পাশাপাশি অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়বে।
সরকার পতনের পর অবৈধ ঘেরের মালিকেরা আত্মগোপন করলেও চাষ বন্ধ নেই। শুধু তা-ই নয়, আরও প্যারাবন কাটার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা চলছে। এদিকে সোনাদিয়া দ্বীপ ও আশপাশের এলাকায় বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংসের কার্যক্রম বন্ধে ও অবৈধ চিংড়িঘের উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পরিবেশসচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ১২ কর্মকর্তা বরাবর একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কয়েকজন আইনজীবী ও উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্যের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার এ নোটিশ পাঠানো হয়। যাঁদের কাছে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে, আশা করি এবার তাঁদের হুঁশ হবে।
মহেশখালীর ইউএনও মীকি মারমা বলেন, এখন নতুন করে আর প্যারাবন কাটা হচ্ছে না। যে চিংড়িঘেরগুলো সাম্প্রতিক কালে করা হয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদ করে সেখানে প্যারাবন সৃজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে চাই, এবার সত্যিই তারা কিছু করবে। মাছের ঘেরগুলো ধ্বংসই করতে হবে। রাজনৈতিকভাবে সেগুলোর যেন হাতবদল হয়ে না যায়। মহেশখালীর পরিবেশ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আর অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার সুযোগ নেই।