শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মুক্তি

জননিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলের পর স্বাভাবিকভাবে আশা করা গিয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সম্প্রতি কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর জামিনে মুক্তি পাওয়ার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশঙ্কা, যেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগারে থেকেই ঢাকার অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করত, সেখানে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর তা আরও পাকাপোক্ত হবে। অথচ নিরীহ মানুষ ভয়ে থানায় অভিযোগ নিয়েও যাবেন না। এই পরিস্থিতি জননিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি বলে মনে করি। 

প্রথম আলোর তথ্য অনুযায়ী, জামিনে মুক্ত হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর খাতায় ‘কিলার আব্বাস’ হিসেবে পরিচিত মিরপুরের আব্বাস আলী, তেজগাঁওয়ের শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, হাজারীবাগ এলাকার সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন। মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তালিকায় আরও আছেন ঢাকার অপরাধজগতের দুই ব্যক্তি খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা একে দেখছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা হিসেবে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বড় অপরাধীদের মামলা, জামিন, গ্রেপ্তার ও সামগ্রিক কার্যক্রমের ওপর পুলিশের বিশেষ শাখাসহ অন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নজরদারি করত। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হয়। এই সুযোগে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা খুব সহজে বের হয়ে আসছে। বের হওয়ার পর তাদের ওপর নজরদারিও নেই।

২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম প্রকাশ করে। এতে ওপরে উল্লিখিত আব্বাস, হেলাল, টিটন ও রাসুর নাম ছিল। জামিনে বের হওয়া প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ অনেক মামলা রয়েছে। কোনো কোনো মামলায় তাঁদের সাজাও হয়। কোনো কোনো মামলায় উচ্চ আদালত থেকে অব্যাহতিও পেয়েছেন কেউ কেউ। সুইডেন আসলামসহ কয়েকজনের ক্ষেত্রে অব্যাহতি পাওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল না করার ঘটনা উদ্বেগজনক। 

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে কারাগারে থাকা অবস্থায় অন্তত সাত শীর্ষ সন্ত্রাসীর ঢাকার অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ ও সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়। এসব ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিভিন্ন সময় কারাগারে থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অপরাধে জড়ানোর তথ্য দেয়। সরকার যেসব সংস্কারের কথা বলছে, তা বাস্তবায়ন করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন আবশ্যক। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পেরেছে বলে মনে হয় না। 

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধ ডাকাতির চেষ্টা ও সন্ত্রাসী ঘটনার কোনো যোগসূত্র থাকাও অস্বাভাবিক নয়।

জামিন পাওয়াকে অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সাফাই গাইতে পারেন। কিন্তু এখানে দেখতে হবে জামিন পাওয়া ব্যক্তি আরও অনেক ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে পড়ে কি না। যাঁরা কারাগারে থেকে অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে, উদ্দীষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে, তারা বাইরে এসে কী করবে, সেটা অনুমান করা কঠিন নয়।  

পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কারাগার থেকে বের হয়ে আসা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর যে অঙ্গীকার করেছেন, সেটা যাতে নিছক কথার কথা না হয়। তাঁরা যেন ভুলে না যান যে জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব সরকারেরই।