সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প

দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত

ভূমিকম্পের ফলে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। এই ভূমিকম্পে যারা নিহত হয়েছে, তাদের প্রতি আমরা জানাই গভীর শোক এবং আহতদের প্রতি সহমর্মিতা।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই দেশে প্রায় ১১ হাজার মানুষ মারা গেছে। এ ঘটনায় আজ বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করছে। ভূমিকম্প এলাকায় প্রচণ্ড ঠান্ডা আবহাওয়া থাকায় উদ্ধারকাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে। ধারণা করা যায়, উদ্ধারকাজ শেষ হলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।

এ ভূমিকম্পকে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলোর একটি বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই এলাকার মাটির নিচে থাকা অ্যারাবিয়ান প্লেটটি উত্তর দিকে সরে গিয়ে আনাতোলিয়ান প্লেটে ধাক্কা দিলে এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের তৈরি হয়। ২০০৩ সালে ইরানের বাম শহরের কাছাকাছি ৬ দশমিক ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়, যার ফলে ২৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

এবার তুরস্ক ও সিরিয়ার বিরাট এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভূমিকম্পে যারা আহত হয়েছে, তাদের ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে এনে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে পারলে বাঁচানো সম্ভব। সেই সঙ্গে দুর্গত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য বিশ্বের সব দেশ, মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে উদ্ধারকারীসহ বাংলাদেশ থেকে সব মিলিয়ে ৭০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল রাতে তুরস্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছে।

ভূমিকম্প মোকাবিলায় মানুষের কিছু করণীয় না থাকলেও ভূমিকম্পসহনশীল ভবন নির্মাণ করতে পারলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমানো সম্ভব। নেপালে ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে রাজধানী কাঠমান্ডুর বহু বাড়িঘর ধসে পড়ে। ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকায় ঝুঁকি বেশি।

এসব ফল্টে ভূমিকম্প হলে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা বিপদের মাত্রা অনেক বেশি। বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা শহরে অনেক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ইমারত নীতিমালা ও ভূমির ধরন না মেনে। যেসব ভবন লাল মাটি বা শক্ত মাটির ওপর নির্মিত, সেসব ভবনে ঝুঁকি কম। অন্যদিকে যেসব ভবন বালু ও নরম মাটিতে করা হয়েছে, সেসব ভবনের ঝুঁকি খুব বেশি। নির্মম হলেও সত্য ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার অনেক ভবন জলাভূমি ভরাট করে বালু ও নরম মাটির ওপর নির্মিত। ফলে সামান্য ভূমিকম্প হলেও বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা আছে।

রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকার ভবনগুলো কতটা ভূমিকম্পসহনশীল, তা নির্ণয় করে একটি তালিকা তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হলেও রাজউক তাতে রাজি হয়নি। এ ধরনের তালিকা হলে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা যেত, তেমনি রাজউকের দুর্বলতাও ধরা পড়ত।

রানা প্লাজার ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে উদ্ধারকাজে আমাদের অক্ষমতা ও অদক্ষতা কত প্রকট। সে তুলনায় ভূমিকম্পসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় তুরস্কের সক্ষমতা অনেক বেশি।

তারপরও সেখানে মানবিক বিপর্যয় এড়ানো যায়নি। বাংলাদেশে এর চেয়ে কম শক্তিশালী কোনো ভূমিকম্প হলেও পরিস্থিতি কী হবে, অনুমান করা কঠিন নয়।