নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ভুক্তভোগী গোটা দেশের মানুষ। কাঁচাবাজারে গেলে এর বাস্তবতা আরও বেশি টের পাওয়া যায়। পণ্যের দাম বাড়ানোয় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি কারও অজানা নয়। যে পণ্য কৃষকের কাছ থেকে কিনে আনা হয়, সেটি শহরের বাজারগুলোতে বিক্রি করা হয় কয়েক গুণ বেশি দামে। এমনকি শহরের ভেতরেই এমন কাণ্ড ঘটছে। চট্টগ্রাম নগরের ভেতরেই পাইকারি বাজার থেকে কেনা সবজি খুচরা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে দুই থেকে আড়াই গুণ বেশি দামে। অর্থনৈতিক দুরবস্থার এ সময়ে সাধারণ ভোক্তারা আরও বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন এতে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, চট্টগ্রাম নগরে পাইকারি বাজার থেকে কেনার পর খুচরা বাজারে সবজি বিক্রি করা হচ্ছে অন্তত ১১৩ শতাংশ বাড়তি দামে। অথচ সরকারি হিসাবে, শাকসবজির ক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ মুনাফার পরিমাণ ৩০ শতাংশ। তার মানে, নগরের খুচরা বাজারগুলোতে সবজির দামের পার্থক্য সরকারি মুনাফার হার থেকেও তিন গুণের বেশি। নগরের বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার, কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজার, কর্ণফুলী মার্কেট বাজার, চকবাজার ও কাজীর দেউড়ী বাজারে গিয়ে এমন চিত্র পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম নগরের সবজির বৃহত্তর পাইকারি আড়ত রেয়াজউদ্দিন বাজার। সেখানে গত শুক্রবার আড়তে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ২৬ টাকায়। তবে সেদিন নগরের খুচরা বাজারগুলোতে একই বেগুন বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। আলুসহ পটোল, করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঢ্যাঁড়সসহ সব সবজির ক্ষেত্রে দামের এমন পার্থক্য দেখা গেছে। সরকারি মুনাফার হার ধরলে খুচরায় এসব সবজির দাম সর্বোচ্চ ২৬ থেকে ৩৩ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু খুচরা বাজারে এসব সবজির দাম কয়েক গুণ বেশি।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়ত থেকে খুচরা বাজারে আনার সময় খরচ বেশি বর্তমানে। আড়তদারি খরচ, পরিবহন ও সবজি নষ্ট হওয়ার কারণে দামে প্রভাব পড়ে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের এমন দাবির সত্যতা মেলে না। রেয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতি বলছে, সব মিলিয়ে আড়তে দামের সঙ্গে দেড় টাকা যোগ হতে পারে, এর বেশি নয়। বর্তমানে কাঁকরোল ও কাঁচা মরিচ ছাড়া সব সবজির দাম ৯ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা এ-ও যুক্তি দেখান, ৫০ কেজি সবজির বস্তায় নিম্নমান ও পচা সবজি ফেলে দিতে হয় অন্তত পাঁচ কেজি। তা সত্য হলেও কীভাবে মুনাফার হারে এমন তারতম্য থাকে। চট্টগ্রাম জেলা কৃষি বিপণন সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক বলছেন, বিধিমালা না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
আমরা আশা করব, জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। নগরের খুচরা বাজারগুলোতে তদারকি বাড়ানো হোক।