কথায় বলে, খলের ছলের অভাব হয় না। ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কখনো আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেন, কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলেন। কিন্তু তাঁদের একটাই উদ্দেশ্য থাকে, যেকোনো উপায়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে রাখা। তাঁরা এটাও জানেন যে পণ্যের দাম একবার বাড়লে সেটি কমানো কঠিন।
সাম্প্রতিক কালে দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মুরগির ডিম, ব্রয়লার ও সোনালি জাতের মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। নতুন দর অনুসারে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগি সর্বোচ্চ ২৭০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু প্রথম আলো বাজারে খোঁজখবর নিয়ে জেনেছে, নির্ধারিত দামে এসব পণ্য পাওয়া যায় না। বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
বৃহস্পতিবার ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ও সাদা ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ছিল ১৫৫ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮৫-১৯০ টাকা আর সোনালি মুরগি ২৭০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহে ১০ টাকা করে কম ছিল।
অন্যদিকে চাল নিয়েও ক্রেতাদের স্বস্তি নেই। কয়েক সপ্তাহ আগে চালের দাম কেজিতে ৪–৬ টাকা বাড়ার পর আর কমেনি। বেড়েছে কাঁচা মরিচ, বেগুন ও বরবটির মতো সবজির দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আমদানি করা কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২০০-২২০ টাকা দরে। বেগুন ৮০-১১০ টাকা ও বরবটি যথাক্রমে ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
মাছের বাজারেও কোনো সুসংবাদ নেই। রুই, চিংড়ি ও পাঙাশ মাছের দাম কেজিতে ৩০-৫০ টাকা করে বেড়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক রেজা আহমেদ খান বলেছেন, বাজারে সরবরাহ ও চাহিদার তারতম্যে এ দামে সামান্য কিছু পার্থক্য হতে পারে। তবে এসব পণ্যের উৎপাদন খরচ কমানো গেলে দাম এমনিতে কমে আসবে।
রেজা আহমেদ খানের এই বক্তব্যে ফাঁকি আছে। উৎপাদন খরচ ধরেই তো খামারিরা দাম নির্ধারণ করেছিলেন। গত এক সপ্তাহে এসব পণ্যের সরবরাহ কমে গেলে তার কারণও খতিয়ে দেখা দরকার। পরিবহন ব্যয় বাড়লে কিংবা সরবরাহ কম হলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এখানে কী ঘটেছে, বিপণন অধিদপ্তরের উচিত সেটা দেশবাসীকে জানানো।
একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী দুগ্ধজাত পণ্যের দাম চলতি সপ্তাহে আগের তুলনায় দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার খবরটিও উদ্বেগ তৈরি করে। ফন্টেরার (নিউজিল্যান্ডের কৃষকদের মালিকানাধীন একটি বহুজাতিক ডেইরি প্রতিষ্ঠান) ফার্মগেট দুধের মূল্যে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলে ননিযুক্ত গুঁড়া দুধ। জিডিটিতে চলতি সপ্তাহে পণ্যটির দাম বেড়েছে আগের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ। টনপ্রতি গড় মূল্য পৌঁছেছে ৩ হাজার ৪৪৮ ডলারে। আন্তর্জাতিক বাজার দাম বাড়লে দেশি বাজারেও বাড়বে, কোনো সন্দেহ নেই।
সীমিত আয়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে অতিষ্ঠ। এরপরও যদি দফায় দফায় দাম বাড়তে থাকে, তাঁরা নিরুপায়। ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে সরকার অপেক্ষাকৃত কম দামে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতে পারে। সেই সঙ্গে নিয়মিত বাজার তদারক করতে হবে, যাতে কেউ কারসাজির সুযোগ না পান।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। বড় বড় সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত উপদেষ্টারা যদি বাজার নিয়ন্ত্রণের মতো ছোট্ট বিষয়টির প্রতি একটু নজর দিতেন, তাহলে সীমিত আয়ের মানুষেরা একটু স্বস্তি পেতেন।