সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

গঙ্গাচড়ায় চাল বিতরণ

অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সরকারের প্রশংসিত কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি হলো সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি। এ কর্মসূচিতে নানাভাবে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের আর্থিক ও খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। যার মধ্যে একটি হচ্ছে দুস্থদের খাদ্যসহায়তা (ভিজিএফ)। এর অধীনে দুস্থ ও গরিব পরিবার বিনা মূল্যে ১০ কেজি করে চাল পায়। সাধারণত দুই ঈদ উৎসবের আগে এ চাল বিতরণ করা হয়। কিন্তু কোনো কোনো উপজেলায় সেই চাল বিতরণে দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটে। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না। ফলে দুর্নীতিবাজেরা উৎসাহিত হন এবং দরিদ্র মানুষেরা বঞ্চিত হন।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়বিল ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফের চাল বিতরণে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটল, তা খুবই দুঃখজনক। সেখানে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় দুজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। গ্রাম পুলিশের এক সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনের বিরুদ্ধে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। দরিদ্র মানুষ সরকারের সহায়তা নিতে গিয়ে মারধরের শিকার হবেন, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলাটিতে ভিজিএফ কার্ডধারীর সংখ্যা ৪২ হাজার ৮২৫। এর মধ্যে বড়বিল ইউনিয়নে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৩২৩টি কার্ড। বিধি মোতাবেক বিনা মূল্যে প্রত্যেক কার্ডধারীকে দেওয়া হয় ১০ কেজি চাল। কিন্তু বুধবার চাল বিতরণের সময় দেখা গেছে, কয়েক ব্যক্তি অনেকগুলো কার্ড নিয়ে হাজির হয়েছেন; অথচ এক ব্যক্তির কাছে একটি কার্ডই থাকার কথা। যেসব ব্যক্তি মূলত ফড়িয়া বা চাল ব্যবসায়ী, তাঁদের হাতে কোনোভাবেই দরিদ্র মানুষের এই কার্ড যাওয়ার কথা নয়। তাঁরা একেকজন ৫টি থেকে শুরু করে ৩০–৩৫টি কার্ড নিয়ে বস্তা বস্তা চাল উত্তোলন করছিলেন। সে সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দরিদ্র মানুষেরা প্রতিবাদ করেন। তখন তাঁদের মারধর করা হয়। সেখানে দুজন আহত হন। এর মধ্যে একজন যামিনী বর্মণকে (৬০) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

বৃদ্ধ যামিনী বর্মণ বলেন, ‘গ্রাম পুলিশের সদস্য লেবু মিয়া ও চেয়ারম্যানের চার-পাঁচজন লোক আমাকে লাঠি দিয়ে মেরেছেন। আমাকে অন্যায়ভাবে যাঁরা মেরেছেন, আমি তাঁদের বিচার চাই।’ আরেক ভুক্তভোগী মিলন চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা তো চাল ছিনতাই করতে যাইনি। চাল তুলতে গিয়ে দেখি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অনিয়ম। এই অনিয়মের প্রতিবাদ করা কি অন্যায়? উল্টো আমাকে মারধর করেছে। আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আমরা তাঁর এই বক্তব্যে আস্থা রাখতে চাই। আমরা জানতে চাই, ভিজিএফের কার্ড কী করে চাল ব্যবসায়ী ও একেকজনের হাতে অনেকগুলো করে গেল? অনিয়মকারী ও দরিদ্র মানুষকে পেটানোর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের কোনোভাবেই ছাড় নয়।