সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

হরিণাকুণ্ডুর খাল

দখলমুক্ত করতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিন

পাহাড়ের ওপর মাচানঘরের মতো বানানো হয়েছে ঘরগুলো। সবুজ প্রকৃতির মধ্যে সেগুলো দেখতেও অনেকের কাছে ভালো লাগতে পারে। তবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, মূলত একটি খালের ওপরই ঘরগুলো বানানো হয়েছে।

একেবারে খালের ওপরে হওয়ায় কংক্রিটের ওপর ঝুলন্তভাবে স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে দোকানঘর আর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এভাবে খালটিকে নিশ্চিহ্ন করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এ ঘটনা ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শাখারিদহ বাজারের। এলাকাবাসী খালটি দখলমুক্ত করতে দাবি জানিয়ে আসছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ঝিনাইদহ-হরিণাকুণ্ডু সড়কের পাশে উপজেলার শাখারিদহ এলাকায় শত বছরের একটি বাজার আছে। এই বাজারের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল।

সেটির আধা কিলোমিটার এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক দখলদার দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দখলদারদের সরে যাওয়ার জন্য প্রতিবছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়া হয়। তবে রুটিনমাফিক সেই নোটিশের তোয়াক্কা করেন না ব্যবসায়ীরা; বরং বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে খালের জায়গা দখল করে আরও নতুন নতুন স্থাপনা তোলেন।

২৫ বছর ধরে এভাবেই চলছে; আর একটি খাল হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় খালের প্রস্থ ৫০ ফুট ছিল। কিন্তু দুই পাড় থেকে দখল অব্যাহত থাকায় এখন খালের প্রস্থ কোথাও ১০ ফুট; আবার কোথাও ১৫ ফুট আছে। ইতিমধ্যে খালের প্রায় ৬০ শতাংশ জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে।

পাউবোর ঝিনাইদহ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, তাঁরা উচ্ছেদ অভিযানের জন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন। ঠিকাদারও নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাঁরা উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারছেন না। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। পাউবোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেই তাঁরা চলেন।

পাউবো যে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণ দেখাচ্ছে, সেটিও বিশ্বাসযোগ্য নয় অনেকের কাছে। কারণ, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের তেমন বড় কোনো নেতা নেই। উচ্ছেদ অভিযানের প্রচেষ্টার বিষয়টি অনেকটা লোকদেখানো বলে স্থানীয় লোকজন মনে করেন। এখানে পাউবোর সদিচ্ছার অভাবকেই দায়ী করছেন তাঁরা।

খালটি সরু হয়ে যাওয়ায় বাজারের পানিনিষ্কাশন এবং ওই এলাকায় কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে খালটি দ্রুত দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এখানে পাউবো ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনের করণীয় আছে। খালটি দখলমুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে। আর পাউবোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা যে অভিযোগ জানাচ্ছেন, আশা করি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখবে।